আশা বাঁচিয়ে রাখলেন মিরাজরা

৭ উইকেট পড়েছে সেশনে। প্রথম চারটি যেখানে
বাংলাদেশকে হতাশায় ভাসিয়েছে, পরের তিনটি দেখিয়েছে চতুর্থ দিন সকালকে ঘিরে নতুন আশা।
মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম আর নাঈম
হাসান—তিন স্পিনারই
একটি করে উইকেট নিয়েছেন। তাঁদের বল সামলাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তি
ছিল স্পষ্ট। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকও স্পিনারদের জন্য ব্যাটসম্যানের আশপাশে ফিল্ডারের
ঘের দিয়ে রেখেছেন। সব মিলিয়েই আশা জাগছে, মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন সকালে হয়তো ওয়েস্ট
ইন্ডিজের বাকি ৭ উইকেট দ্রুতই তুলে নিতে পারবে বাংলাদেশ।
টেস্টে জয়ের ন্যূনতম সম্ভাবনা জাগাতে এ
ছাড়া অবশ্য উপায়ও নেই বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানের লিড পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ
আজ তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে। ৭ উইকেট হাতে রেখেই ১৫৪ রানে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা।
কী উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই না শেষ সেশনটা
কাটল বাংলাদেশের! চা-বিরতির আগে যেখানে লিটন দাস ও মিরাজের ব্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের
প্রথম ইনিংসের ৪০৯ রানের যতটা সম্ভব কাছে যাওয়ার আশায় ছিল বাংলাদেশ, বিরতি থেকে এসেই
সেই আশার জলাঞ্জলি। ৩৩ বল আর ১৫ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অলআউট ২৯৬
রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ লিড পায় ১১৩ রানের।
সেখান থেকে চতুর্থ ইনিংসে নামার আগে বাংলাদেশের
জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা জাগাতে হলে আজই বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দু-একটি উইকেট তুলে নিতে
হতো। দিন শেষ হওয়ার আগে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে আগামী সকালের জন্য কিছু আশা জাগিয়ে রাখল
বাংলাদেশ।
তাইজুল দারুণ লাইন-লেংথ মেনে বল করে গেছেন,
দ্বিতীয় স্পেলে এসে সেটির পুরস্কার পেয়েছেন। মিরাজ তো বাংলাদেশের হয়ে দারুণ এক কীর্তি
গড়লেন, হয়ে গেছেন বাংলাদেশের জার্সিতে টেস্টে দ্রুততম ১০০ উইকেট পাওয়া বোলার। তবে এ
দুজনের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ধাক্কা দিয়েছেন নাঈম।
বাংলাদেশের ইনিংসের সময়ে ক্যারিবীয় স্পিনার
রাকিম কর্নওয়ালের সাফল্যই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, এই পিচ আস্তে আস্তে স্পিনারদের দিকে হাত
বাড়াবে। বাংলাদেশের তিন স্পিনার নিয়ে নামার কৌশল আগেই বুঝিয়ে দিয়েছে, স্পিনই বাংলাদেশের
ভরসা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই স্পিন আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মুমিনুল
হক।
সাফল্য পেতে অবশ্য সময় লাগেনি। ওয়েস্ট
ইন্ডিজ ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই ধাক্কা দিয়েছেন নাঈম। উইকেট পাওয়ায় অবশ্য উইকেটকিপার
লিটন দাসের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারও অবদান আছে।
চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে নাঈমের করা লেগ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলটাকে থার্ডম্যান অঞ্চলে সীমানার বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন উইন্ডিজ ওপেনার ক্রেইগ ব্রাফেট। কিন্তু বলের লাইনে যেতে পারেননি। বল চলে যায় পেছনে লিটনের হাতে।
বাংলাদেশ ক্যাচের আবেদন করলেও আম্পায়ার
নাকচ করে দেন, কিন্তু লিটন সেকেন্ডও কালক্ষেপণ না করে অধিনায়ক মুমিনুলকে জানিয়ে দেন
রিভিউ নিতে। রিভিউতে পরে দেখা যায়, বল যাওয়ার পথে ব্রাফেটের গ্লাভস আলতোভাবে ছুঁয়ে
গেছে।
১১ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ঠিক পাঁচ
ওভার পর ধাক্কা দিলেন মিরাজ। তাঁর বলে শেন মোজলি দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিলেন মোহাম্মদ
মিঠুনের হাতে।
২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জন ক্যাম্পবেল
ও বোনার কিছুটা থিতু হয়েছিলেন উইকেটে। কিন্তু তাইজুল দ্বিতীয় স্পেলে এসে সে জুটি ভেঙে
দেন।
প্রথম স্পেলে দারুণ লাইন-লেংথ রেখে ৪ ওভারে
১০ রান দিলেও উইকেট পাননি তাইজুল। দ্বিতীয় স্পেলে এসে প্রথম ওভারেই তুলে নিলেন ক্যাম্পবেলকে।
কিন্তু উইকেটটা অদ্ভুতুড়েই। তাইজুলের বলে ডিফেন্সিভ শট খেলেছিলেন ক্যাম্পবেল। কিন্তু
বল তাঁর ব্যাটে লাগার পর পিচে একবার বাউন্স করে চলে গেল পেছনে। ক্যাম্পবেল তখন শটের
স্টান্স ধরে দাঁড়িয়ে, আর বল তাঁর পেছনে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ল স্টাম্পে। বেল পড়ে
গেল! বাংলাদেশ তখন উচ্ছ্বসিত, আর ক্যাম্পবেল তখনো কীভাবে কী হলো, সে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত।
এখনো টেস্টে দুদিন বাকি। এই টেস্টে তাই
ড্রয়ের সম্ভাবনা কমই! জয় না পরাজয়—কোনটি হবে বাংলাদেশের ললাটলিখন? হয়তো সেটি
ঠিক করে দেবে চতুর্থ দিনের সকালই। পিচে স্পিনারদের দাপট শুরু হয়ে গেছে, আগামী দুদিনে
তা আরও বাড়বে। এই পিচে চতুর্থ-পঞ্চম দিনে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার আগে লক্ষ্যটা
যতটা সম্ভব কম রাখতে চাইবে বাংলাদেশ, আর সে লক্ষ্যে কাল সকালে দ্রুত উইকেট নেওয়াটা
বলতে গেলে অবশ্যকর্তব্যই হয়ে গেছে।








