অবশেষে পরীক্ষার দায়িত্বে ফিরলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

গণবদলি ও গণ-শোকজের মুখে কর্মসূচি স্থগিত করে অনেকটা বাধ্য হয়েই
অবশেষে বার্ষিক পরীক্ষার কাজে ফিরেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী
শিক্ষকরা। গতকাল রোববার থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা
নেওয়া শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছেন আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা। গতকাল বেশির ভাগ
বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিজ্ঞান অথবা গণিত বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক শামছুদ্দিন
মাসুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং অভিভাবকদের
দাবির মুখে আমরা পরীক্ষার কাজে ফিরছি। পাশাপাশি গণহারে যেভাবে শিক্ষকদের শোকজ ও
বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে সহকারী
শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন। এর পর ১ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা
বর্জন এবং ২ ডিসেম্বর থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তালা
ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। গত ৪ ডিসেম্বর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একজন প্রধান শিক্ষকসহ ৪৩
জন শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় ‘প্রশাসনিক বদলি’ করার পর আন্দোলন স্থগিত করে পরীক্ষায়
ফেরার ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।
এদিকে, আন্দোলনের মধ্যেই দেশের কিছু এলাকায় দুই থেকে তিনটি বিষয়ের
বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কোথাও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায়, কোথাও অভিভাবকদের
সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নেন। দেশের প্রায় ৪২ হাজার সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্বে থাকায়
পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়ায় সেসব বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র অন্য
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে। এতে প্রশ্নপত্রে মিল থাকার আশঙ্কা প্রকাশ
করেছেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও কয়েকটি জেলা প্রাথমিক
শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয় আলাদাভাবে
প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে। ফলে প্রশ্নে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যেসব উপজেলায় অভিন্ন
প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশন করা হয়েছে, সেখানে প্রশ্নে মিল থাকতে পারে। সেসব
উপজেলায় একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না নিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫
হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় এক
কোটি এবং কর্মরত তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকের অধিকাংশই সহকারী শিক্ষক।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন
পাচ্ছেন। গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।
আন্দোলন চলাকালে দাবি পূরণের আশ্বাস, চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে
শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েও শিক্ষকদের কাজে ফেরানো যায়নি। পরে বাধ্য হয়েই প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গণহারে বদলি ও শোকজের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর গত ১ থেকে ৩
ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন জেলায় সহকারী শিক্ষকদের গণহারে শোকজ করা হয়। এর পর ৪
ডিসেম্বর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকসহ মোট ৪৩ জনকে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হলে
আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে।
গণবদলি হওয়া শিক্ষকদের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রাথমিক
শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলন
করা শিক্ষকদের সংগঠনগুলো। শিক্ষক নেতা শামছুদ্দিন মাসুদ সমকালকে বলেন, অনেক সাধারণ
শিক্ষক বিনা কারণে বদলি হয়েছেন, যা নিছক হয়রানি। এসব বদলি ও শোকজ প্রত্যাহারে আমরা
আবেদন করব। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করবে।








