ফাইজারের টিকাও আসছে দেশে
করোনা রোধে
দেশব্যাপী কর্মসূচির তৃতীয় দিন বিভিন্ন স্থানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন। এদের
মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও আছেন। শুরুতে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিল তা কেটে যাচ্ছে।
ফলে
নিবন্ধনের সংখ্যা যেমন বাড়ছে। তেমনি ভিড় হচ্ছে টিকাদান কেন্দ্রেও। মঙ্গলবার সারা
দেশে ১ লাখ ১০ হাজার ৮২ জন টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬ লাখের বেশি
মানুষ। ৩ দিনে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ২০৭ জনের শরীরে মৃদু প্রতিক্রিয়া
দেখা গেছে।
মঙ্গলবার
দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য সেবা
বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে প্রথম দিকে কারও কারও মধ্যে
ভয় থাকলেও এখন তা কেটে গেছে।
সবাইকে
আশ্বস্ত করে সচিব বলেন, অস্থিরতার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত টিকা আছে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ
অক্সফোর্ডের টিকা পাবে।
এছাড়া
ফাইজারের টিকা দেশে আসছে। যতদিন জনগণ টিকা নিতে চাইবে, টিকার মূল্য যাই হোক,
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সুরক্ষা দিতে মানসিকভাবে ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সারা দেশে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৭৪
হাজার ৫৮৬ পুরুষ এবং ২৬ হাজার ৪৯৬ নারী। সব মিলিয়ে গত ৩ দিনে সারা দেশে ১ লাখ ৭৯
হাজার ৩১৮ জন টিকা নিয়েছেন। যার মধ্যে ২০৭ জনের শরীরে মৃদু প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এদিন ঢাকায় ১২ হাজার ৫১৭ জন টিকা নিয়েছেন। ঢাকায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩৩৩ জন টিকা
নিয়েছেন।
এর মধ্যে ৩৩
জনের শরীরে মৃদু প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আবদুল মান্নান বলেন, আপনারা নিজেরাই
দেখছেন, মানুষের লাইন আছে। একের পর এক আসছে এবং টিকা দেওয়ার কোনো ঝামেলা নেই।
অনেকের কাছে
জানতে চেয়েছি, কিন্তু সবাই বলেছেন, টিকা নেওয়ার পর কোনো অস্বস্তি তারা বোধ করছেন
না। সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি মানুষ আসবে এবং সামগ্রিক পরিবেশ আরও বেশি ‘উৎসবমুখর’
হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব।
ইতোমধ্যে ছয়
লাখের বেশি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাইছি মানুষ
নিরাপদে এবং আনন্দের সঙ্গে টিকা নেবে। ভিড় করার দরকার নেই। আমাদের সব সাপোর্ট
এখানে দেওয়া আছে। সবাইকে নিবন্ধন করে টিকা নিতে আসার আহ্বান জানিয়ে মান্নান বলেন,
স্পটেও রেজিস্ট্রেশন করছি, কিন্তু কোনটা করছি? বয়স্ক মানুষ চলে এসেছেন, উনার
রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছি।
এ সময়
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, যে কোনো
ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ‘ওয়েস্টেজ’ ধরেই হিসাব করা হয়। তারপরও আমরা বলেছি, দশের গুণীতক লোক না আসা
পর্যন্ত ভায়াল না খুলতে। তবে আমরা হিসাব করে দেখেছি, অপচয় ১০ শতাংশ এখনো হয়নি।
এদিকে
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৯৭ জন টিকা
নিয়েছেন। সোমবার টিকা নিয়েছেন ৮৯৮ জন। এর আগে ২৮ জানুয়ারি প্রথম দিনে ১৯৯ জন
কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে এ সেন্টারে ৩ হাজার ১৫৪ জন কোভিড-১৯ এর
টিকা নিয়েছেন।
স্বামীর বয়স
৮৯, স্ত্রীর ৮১ : ৮১ বছর বয়সী রওশন আরা আর ৮৯ পেরোনো আব্দুল মতিন থাকেন ঢাকার
রামপুরায়। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন তারা।
রওশন আরা তার স্বামীকে বলছিলেন, টিকা নেওয়ার সময় আমি টেরই পেলাম না। কর্মজীবনে
রওশন আরা মতিন ছিলেন ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক।
হাসতে হাসতে
বললেন, এখানকার সবাই তো আমার স্টুডেন্ট। পরিচিত অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, খুবই ভালো
লাগছে। আব্দুল মতিন ছিলেন প্রকৌশলী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, এ কেন্দ্রে সোমবার ৫০০ জনকে প্রথম ডোজ
দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরের আগেই সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে।
টিকা
কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক তাসমিনা পারভীন বলেন, এখানে প্রথম দিন ২৭০ জন
টিকা নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার নিয়েছেন ৫০০ জন। আর আজ তৃতীয় দিনে সকালেই অনেকে এসেছেন ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, এ পর্যন্ত যারা
টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই ভালো আছেন।
-যুগান্তর প্রতিবেদন