ঝুঁকিতে চামড়া ও সিরামিক খাত

টানা দরপতনের সঙ্গে
লেনদেনে খরা দেখা দিয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। লেনদেন বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও
টাকার পরিমাণ কমছে। সপ্তাহে একদিন কিছুটা উন্নতি হলে পরের চার দিন টানা দরপতন
হচ্ছে। এমন অবস্থা গত নভেম্বর মাসজুড়েই ছিল পুঁজিবাজারে।
বছরের
বেশির ভাগ মন্দা থাকায় অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে অনেক কোম্পানির শেয়ারদর। এমনকি
সার্বিক বাজারও একপ্রকার অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা
স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ৯-এর নিচে নেমে গেছে।
পুঁজিবাজারে
বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয় করা হয় মূল্য আয় অনুপাত দিয়ে। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের
ক্ষেত্রে ঝুঁকিমুক্ত ধরা হয়। আর কোনো কোম্পানির পিই ১০-এর নিচে চলে গেলে, ওই
কোম্পানির শেয়ারদর অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়। সে হিসাবে
বর্তমান পুঁজিবাজার বিনিয়োগের জন্য অনেকটাই উপযুক্ত।
সার্বিক
পুঁজিবাজার অবমূল্যায়িত অবস্থায় থাকলেও পিই বিবেচনায় কয়েকটি খাতের কোম্পানির বিনিয়োগ
ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চামড়া ও সিরামিক খাত। এই দুই
খাতের পিই বর্তমানে ৬০-এর ওপরে রয়েছে।
পুঁজিবাজার
বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দার মধ্যে রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ের মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীদের রীতিমতো নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
অব্যাহত পতনের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী ৬০ শতাংশের ওপরে লোকসানে রয়েছেন। লোকসানের
কারণে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তাদের লেনদেনের পরিমাণ
কমে গেছে। এতে পুঁজিবাজারে এক ধরনের অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের মতে,
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে
বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভালো
করে তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে। সঠিকভাবে তথ্য পর্যালোচনা করে ভালো কোম্পানিতে
বিনিয়োগ করতে পারলে লাভ পাওয়া যাবে।
জানা
গেছে, বর্তমানে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট।
সার্বিক বাজারের থেকেও কম মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে তিনটি খাতের। এছাড়া আর দুটি খাতের
মূল্য আয় অনুপাত ১০-এর নিচে রয়েছে।
বর্তমানে
সব থেকে কম পিই রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের। এ খাতের পিই রয়েছে তিন দশমিক ২৮
পয়েন্টে। পরের অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি খাত। এ খাতের পিই চার দশমিক ৩৮ পয়েন্ট।
ব্যাংক খাতের পিই ছয় দশমিক শূন্য তিন পয়েন্ট। এছাড়া ওষুধ খাতের পিই ৯ দশমিক ১০
পয়েন্ট। আর আর্থিক খাতের পিই ৯ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপরদিকে
বর্তমানে সব থেকে বেশি পিই সিরামিক খাতের। এ খাতের পিই ৮১ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট।
সর্বোচ্চ পিইর তালিকায় এর পরের স্থানে রয়েছে চামড়া খাত। এ খাতের পিই ৬০ দশমিক ৪৪
পয়েন্ট। এছাড়া পাট খাতের ২৬ দশমিক ৬৩ এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতের পিই ২১ দশমিক ৯৯
পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাকি খাতগুলোর পিই ২০-এর নিচে রয়েছে।
এর মধ্যে
প্রকৌশল খাতের পিই ১০ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট, বস্ত্র খাতের ১০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট, সেবা
খাতের ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের ১২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট, বিমা খাতের ১২ দশমিক
৭৪ পয়েন্ট, টেলিকম খাতের ১৩ দশমিক ২৪ পয়েন্ট, ভ্রমণ খাতের ১৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট,
আইটি খাতের ১৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট, বিবিধ খাতের ১৫ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং খাদ্য খাতের
১৫ দশমিক ৯০ পয়েন্ট।
ঢাকা
স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি মূল্যায়নের
একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার পিই। সাধারণত কোনো কোম্পানির শেয়ারের পিই ১০-এর নিচে
থাকলে সেই শেয়ার বিনিয়োগ উপযুক্ত মনে করা হয়। তবে এর সঙ্গে কোম্পানির
পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত। কোনো কোম্পানির
শেয়ারে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কারা আছেন, কোম্পানির আর্থিক
অবস্থা এবং অতীত ইতিহাস খুব ভালো করে পর্যালোচনা করা উচিত।
তিনি
বলেন, কয়েক মাস ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক কোম্পানির
শেয়ার দাম এখন অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্তমান বাজার বিনিয়োগের জন্য বেশ
উপযুক্ত। এই বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ার বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো
রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈশ্বিক
ও দেশীয় অর্থনীতি মন্দার কারণে পুঁজিবাজার দুর্বল হয়ে পড়ছে। লেনদেন কমছে,
বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই চামড়া ও সিরামিক খাত
বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে রপ্তানি কমে যাওয়ায় দুই খাতের আয় ও উৎপাদন
ক্ষমতা স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।








