ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ না করে পুতিন পরাজয়ের মুখে

ব্রিটেনের জনগণের মধ্যে যারা মনে করে, তারা বোকাদের দ্বারা শাসিত,
তাদের রাশিয়ান ও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঘনিষ্ঠভাবে দেখা উচিত। ভ্লাদিমির পুতিন
পদ্ধতিগতভাবে তাঁর দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। ইউক্রেনে তাঁর যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য
একটি অর্থনৈতিক, আর্থিক, ভূ-রাজনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় এবং তা দিন দিন আরও খারাপ
হচ্ছে। তাঁর নিজের অস্পষ্টতার কারণে আরেক জাতীয় হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে
তাঁকে একটি বেঁচে থাকার উপায় প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু পুতিন তা প্রত্যাখ্যান
করেন। এ দুই বোকা একে অপরের প্রতিচ্ছবি।
মস্কোতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় এক ‘শান্তি’চুক্তির কথা ওঠে।
সাধারণভাবে বলতে গেলে এতে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিদান হিসেবে ইউক্রেনের বিশাল
ভূমি হস্তান্তর করা হয়, কিয়েভের স্বাধীনতার সঙ্গে তা ছিল আপসমূলক এবং ভবিষ্যতের
যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। ওই
চুক্তি যদি জোর করে করা হতো, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বিভক্ত হয়ে পড়ত;
ন্যাটো ভেঙে যেত, সম্ভবত মারাত্মকভাবে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিপর্যস্ত
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতো এবং সম্ভবত জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাত করত।
এগুলোই রাশিয়ার যুদ্ধের মূল লক্ষ্য। কিন্তু নব্য-সাম্রাজ্যবাদী
কল্পনা এবং উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন পুতিন। আর প্রস্তাবে ‘না’
জানালেন। তিনি মনে করেন, লড়াই চালিয়ে গেলে একদিকে সবকিছু পাবেন এবং আরও অনেক কিছু
অর্জন করবেন। তিনি বোকা ট্রাম্পকে বোঝাতে পেরেছেন– রাশিয়ার বিজয় অনিবার্য এবং
চক্রান্তকারী ইউরোপীয়রা আসল যুদ্ধবাজ। তবুও তাঁর ধারণা মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ।
শক্তিশালী তথ্য তাঁকে বিভ্রান্ত করে। প্রায় চার বছর পরও তিনি এখনও দোনবাস কাদা ও
বরফে আটকা পড়ে আছেন, আর স্বদেশে সবকিছু ভেঙে পড়ছে।
দুই বছর ধরে উচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে
প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আয়, বছরে ২৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং
মন্দা দেখা দিয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় রাজস্বের প্রায় ৫০ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি ৮
শতাংশে বেড়েছে; সুদের হার ১৬ শতাংশের বেশি। বাজেট ঘাটতি বাড়ছে, পুতিনের যুদ্ধের
তহবিল সংগ্রহের কারণে ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি
অপচয় হয়েছে; রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া ব্যবসাগুলো বিশাল ঋণের মুখোমুখি; বিদেশি
বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে; কৌশলগত পণ্যের আমদানি খরচ ১২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং
ভোক্তা কর ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়ানদের তাদের দুঃখ নিরসনে আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে
হবে। যেমন ভদকার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ।
এই দুর্দশা ক্রমশ বাড়ছে। ইউক্রেন এক দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করেছে।
যেমন রাশিয়ার শোধনাগার, পাইপলাইন এবং অবৈধ রপ্তানি বহনকারী তেল ট্যাঙ্কারের
‘ছায়া বহর’। গত সপ্তাহে কৃষ্ণসাগরে নৌবাহিনীর ড্রোন হামলায় তৃতীয় একটি
ট্যাঙ্কারে আগুন লেগেছে। কিয়েভ নিয়মিতভাবে রাশিয়ার গভীরে জ্বালানি
স্থাপনাগুলোতে আঘাত করছে। ফলে আতঙ্ক ও জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে
রাশিয়ার দুটি বড় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রোসনেফ্ট ও লুকোয়েল দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ
চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাজারসহ এশিয়ান ক্রেতারা দ্বিতীয় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে
তাড়াহুড়ো করছে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি পুতিনের ভূ-রাজনৈতিক
প্রভাবও হ্রাস পাচ্ছে। ইউক্রেনে আটকে থাকা মস্কো কেবল মধ্যপ্রাচ্যের মূল্যবান
মিত্র সিরিয়ার পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ইরানের যুক্তরাষ্ট্র ও
ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনাই দেখতে পেরেছিল। এখন ভেনেজুয়েলাও বৃথা
সমর্থন খুঁজছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেছে; অপমানিত রাশিয়াকে নির্ভরশীল
জুনিয়র অংশীদারের ভূমিকায় অবনমিত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে ভারত সফরে গিয়ে পুতিন
এমন এক দেশের একজন অভাবী ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়েছেন, যে দেশটি মার্কিন চাপের মুখে
এখন রাশিয়ার তেল বর্জন করছে।
‘রাশিয়া জয়লাভ করছে’– এই বয়ান যুদ্ধক্ষেত্রে কথিত সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল।
পুতিনের অন্যতম সহযোগী ইউরি উশাকভ দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অগ্রগতি মস্কো
আলোচনায় ‘ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে’। অর্থাৎ তারা রাশিয়ার হাতকে শক্তিশালী করেছে।
এটা বিভ্রান্তিকর। এই সাফল্যগুলো সামান্য। তাঁর আশ্চর্যজনক পদক্ষেপ, পুরোপুরি
মাত্রায় আক্রমণ এবং জনবল ও উপকরণে অপ্রতিরোধ্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পুতিন
ইউক্রেনকে পরাজিত করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। রাশিয়ান হতাহতের পরিসংখ্যানের
ক্ষেত্রে একটি ব্যর্থতা দেখা যায়, যা আমাদের হতবাক করে।
যেমন ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে দুই লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি নিহত বা
আহত হয়; মোট ১০ লাখের কাছাকাছি। রাশিয়ান জাতি এত বড় যে, তারা ব্যর্থ হতে পারে
না। তাদের সংগ্রামের গর্বিত ইতিহাস থেকে বলা যায়, তাদের পরাজিত করা যাবে না।
কিন্তু পুতিনকে পারা যাবে। তিনি হেরে যাচ্ছেন।








