আখাউড়ায় আকস্মিক বন্যায় ১৯ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ৪৫০ পরিবার
টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের
পাহাড়ি ঢলের ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক
বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ বন্যায় উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের
অন্তত ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪৫০টি পরিবার।
সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আকাশে বৃষ্টি না
থাকলেও, সকাল ৯টার পর আকাশে ঘন মেঘ জমে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। সরেজমিনে দেখা গেছে,
পাহাড়ি ঢলের পানি আখাউড়া-আগরতলা সড়কের বঙ্গেরচর এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত
হচ্ছে। আশপাশের খালগুলো উপচে গিয়ে পানি ঢুকেছে দোকান ও ঘরবাড়িতে, ফলে স্থবির হয়ে
পড়েছে জনজীবন ও ব্যবসা-বাণিজ্য।
তবে আখাউড়া স্থলবন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম
স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। তিনি
জানান, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৩টি ট্রাকে ১৫ মেট্রিক টন বরফায়িত মাছ আগরতলায়
রপ্তানি হয়েছে।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ
আব্দুস সাত্তার জানান, সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত ৪৫-৫০ জন যাত্রী পারাপার হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ভবনের সামনেও পানি ঢুকছে, তবে কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি.এম.
রাশেদুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে
আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে
নেয়া হয়েছে এবং তাদের কাছে শুকনো খাবার পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত
পরিবারগুলোর তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী
প্রকৌশলী মোঃ মনজুর রহমান জানান, ত্রিপুরার হাওড়া নদীর পানি বিপদসীমার ৫২
সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতিকে
আরও জটিল করে তুলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যাটি এতটাই
আকস্মিক ছিল যে অনেক পরিবার প্রস্তুতি নেয়ার আগেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে। অনেককে রাতের
আঁধারে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হয়। ঘরবাড়ি ও খামার নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির
মুখে পড়েছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে থেকে শুরু হওয়া টানা
বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি জমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে
পড়ে। রবিবার পর্যন্ত ১০টি গ্রাম প্লাবিত ছিল, তবে সোমবার এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে
১৯টিতে।