মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭৭৭৭ জনের টাকা ফেরতের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ
সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও মালোয়েশিয়া যেতে না পারা ১৭ হাজার
৭৭৭ জনের টাকা ফেরত দেওয়া এবং তাদের মালোয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে
মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল
করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি
ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই আদেশ
দেন। এর আগে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত
প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ১৭ হাজার ৭৭৭ জনের মালোয়েশিয়ায় যেতে না পারার
দায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন
আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
মালয়েশিয়ায় যেতে সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও গত বছরের মে মাসে ১৭
হাজার ৭৭৭ জন কর্মী যেতে পারেননি। এর মধ্যে একাংশ উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে
পারেননি এবং অন্য অংশ মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তার চূড়ান্ত সম্মতি পাননি।
নিয়োগকর্তারা বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রহণ করার নিশ্চয়তা পাঠায়নি। কর্মীদের
মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ সময় ছিল ৩১ মে।
পরে
জনস্বার্থে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত ও মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরতের
দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ জুন
হাইকোর্ট মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কর্মীদের জীবন ধ্বংসের জন্য
কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও খামখেয়ালিপনাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ১৭ হাজার
৭৭৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা
জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি, হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতি তিন মাস অন্তর উক্ত
ঘটনার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন দাখিল করে
রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের কাছ থেকে
নেওয়া সমুদয় অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মী প্রেরণে
ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রিক্রুটিং
এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০
টাকার অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগের আইনানুগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সংগতি রেখে চাহিদাপত্র
ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
প্রতিবেদনে
কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণের
ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন, যাতে চাহিদাপত্র
ইস্যু থেকে শুরু করে কর্মী বিদেশগমন ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যন্ত তদারকি করা যায়।
এই ব্যবস্থাপনায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এবং
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সংযুক্ত থাকবে।
মন্ত্রণালয়
হতে নিয়োগানুমতি গ্রহণের পর বিএমইটি’র ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ এবং কর্মী
প্রেরণ নির্দিষ্ট করার সুপারিশও করা হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্তৃক অভিবাসী
কর্মীদের কাছ থেকে ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া
ই-ভিসা প্রাপ্ত কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ কর্মীদের বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ
বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত
রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।








