‘জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চ মানুষ হত্যা করেছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২৫ মার্চ চট্টগ্রামে
যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করেন। শুধু তাই নয়,
জিয়া ২৫ ও ২৬ দুই দিনই হত্যাকাণ্ড চালান। ২৭ তারিখ সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে
গিয়েছিলেন জিয়া। তিনি যাতে অস্ত্র নামাতে না পারেন, আমাদের স্বাধীনতাকামীরা তাকে আটকান।’
সোমবার (৮ মার্চ) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত দলটির আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা
বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের হান্নান
সাহেব গংরা ঘোষণা দিয়েছিলেন। জহুর আহমেদ চৌধুরী সাহেব বলেছিলেন, আমরা তো ঘোষণা দিয়েই
যাচ্ছি। সেনাবাহিনীর একজনকে এনে ঘোষণা দিলে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থাকবে। ওই সময় মেজর
রফিক সাহেব অ্যাম্বুশ (আক্রমণ) করে বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি এখান থেকে সরলে পাকিস্তানিরা
জায়গাটা দখল করে নেবে। যার কারণে জিয়াউর রহমান যেহেতু জনগণের কাছে ধরা ছিলেন, তাকে
ধরে নিয়ে এসে ঘোষণা পাঠ করতে বলা হয়। সেই থেকে তাকে ঘোষক বলে প্রচার চালায়। কিন্তু
তিনি (জিয়াউর রহমান) যে ২৫ ও ২৬ মার্চ মানুষ হত্যা করেছেন, সে কথা ভুলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতাকে
হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন যেই জিয়া, সেই জিয়ার দলের নেতারা ৭ মার্চের ভাষণের
মর্ম বুঝবে না, এটাই স্বাভাবিক। ধরে নিতে হবে তারা তাদের পুরোনো প্রভুদের ভোলেনি। তাদের
পালিত দল হিসেবে তারা এখনও আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (জিয়াউর
রহমান) তো আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে আসছেন। তার জন্মও সেখানে। লেখাপড়াও ওখানে।
তিনি কবে বাংলাদেশের হলেন? চাকরি সূত্রে বাংলাদেশে এসেছে। সে সূত্রে বিবাহ করে পরবর্তীতে
থেকে যায়। এটাই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের সম্মান দেয়া
হয়েছে। কিন্তু এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেঈমানি-মুনাফেকি করেছেন। একটা মেজর ছিলেন,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছেন। সেই এই হত্যাকাণ্ডের
(১৫ আগস্ট) মূলহোতা ছিলেন এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যারা ১৫ আগস্টের হত্যার
সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে
দেয়, এ দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল থেকে বাংলাদেশের
মানুষ কী আশা করবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়ন
করেছি, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এটা তাদের একটু পছন্দ নয়। তাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু।
বিলাসী জীবন কাটিয়েছে। এরা মানুষের কষ্ট বুঝবে কী করে? আমি আমাদের নেতাকর্মীদের
বলবো, ওরা কি বললো, এটা নিয়ে কথা বলার
দরকার নেই, চিন্তা করার দরকার নেই। এই করোনায় তারা কত কথা বলেছে, কিন্তু টিকা তো তাদের
নিতে হলো। আমি সরকারে আছি, পয়সা দিয়ে টিকা কিনে ফ্রি দিচ্ছি। বিনা পয়সার টিকা তো বিএনপি
নেতারা নিয়েছেন। এর আগে কী বলেছেন? এজন্য তারা কী বললো তা দেখার দরকার নেই।’
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে
একটি পূর্ণাঙ্গ গেরিলা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। একেকটা লাইন একেকটা
নির্দেশনা। এটাই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। যে দেশ তিনি স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, সে দেশের
টেলিভিশন রেডিও তার ভাষণ প্রচার করতে পারতো না। এটা প্রচারে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা।
আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, যারা দেশের আনাচে-কানাচে এই ভাষণ বাজিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ ভাষণটাকে
(৭ মার্চের ভাষণ) ছোট করতে চায়, বিএনপির কয়েকজন নেতা, সাবেক ছাত্রলীগও আছে। তারা নাকি
এ ভাষণে স্বাধীনতার কোনো ঘোষণাও পাননি। এরা পাবেন না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও পায়নি।
এরা পাকিস্তানি হানাদারদের পদলেহনকারী, খোশামোদি, তোষামোদকারী।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিন (৭ মার্চ)
পাকিস্তানি বাহিনী প্রস্তুতি নিয়ে বসেছিল। এই ভাষণের ভিত্তিতে এদের আক্রমণ করে শেষ
করে দেবে। জাতির পিতা এই কৌশল বুঝতেন। তিনি ভাষাটা জানতেন, মানুষকে কীভাবে বলতে হবে।
এটাই তার রণকৌশল। তার কথা বাংলাদেশের মানুষ বুঝেছিল এবং অক্ষরে অক্ষরে নির্দেশনা মেনে
কাজ করেছে। এটা একজন বোঝেনি, তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সিরাজুল আলম
খান। তিনি সেদিনের ভাষণের পর আমাদের বাসায় গেলেন। তখন বঙ্গবন্ধুকে বললেন, লিডার আপনি
কী বললেন, সব মানুষ হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে! সেখানে আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদসহ অনেকে
ছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, আপনারা এত মিথ্যা কথা বলেন কেন? মানুষ তো খুশিতে লাফাতে লাফাতে
যাচ্ছে। একসঙ্গে স্লোগান দিচ্ছে। মানুষ খইয়ের মতো ফুটছে। আব্বাকে বললাম, তাদের কথা
বিশ্বাস করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, আজকে বিএনপির কয়েকজন নেতার
বক্তব্য এবং ওই দিনের সেই কথা মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়, তারাও হানাদারদের তোষামোদকারী।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান,
যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর
রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।








