বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণে ঝুঁকি বৈদেশিক ঋণের সব তথ্য চেয়েছে আইএমএফ
আন্তর্জাতিক
অর্থ তহবিল (আইএমএফ) দেশের বৈদেশিক ঋণের সব ধরনের তথ্য চেয়েছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কে জানতেই তারা এসব তথ্য চায়। ইতোমধ্যে এসব
বিষয়ে সংস্থাটিকে সরকার থেকে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে।আরও কিছু
তথ্য দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের কী পরিমাণ কিস্তি কখন পরিশোধ
করতে হবে, এর বিপরীতে ডলারের সংস্থান কীভাবে করা হচ্ছে-তা জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
আইএমএফের
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের মধ্যে
স্বল্পমেয়াদি ঋণ অনেক কম। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি। ফলে ঋণ পরিশোধে সরকার সময় পাচ্ছে।
এতে সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণের কারণে সার্বিক অর্থনীতিতে তেমন ঝুঁকি নেই। তবে
বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ অনেক বেশি, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তুলনামূলকভাবে কম।
বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণের কারণে সরকারের ওপর ঝুঁকি নেই। তবে ওই ঋণ পরিশোধে
বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই।
ফলে ওই ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকেই জোগান দিতে হবে। এতে রিজার্ভ চাপে
পড়বে। কেননা রিজার্ভ ইতোমধ্যেই বেশ চাপে আছে। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের একটি বড়
অংশ নেওয়া হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে। যা ১৯০ কোটি ডলার।
নির্মাণ খাতে ১৪ কোটি ডলার ও বাণিজ্য খাতে ১৭৯ কোটি ডলার। এসব ঋণেল বিপরীতে কোনো
বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে না। ফলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা
থেকেই এসব ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে হবে। এটি বেশ কঠিন। কারণ
এখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় রপ্তানির প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে
কাঁচামাল ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আমদানিতে। ফলে এ খাত থেকে ডলার নিয়ে বৈদেশিক ঋণ
পরিশোধে জোগান দেওয়া কঠিন হবে। এছাড়া রেমিট্যান্স কম আসায় তা দিয়ে আমদানির ঘাটতি
মেটানো যাচ্ছে না। ফলে এ খাত থেকেও ডলারের জোগান দেওয়া আরও কঠিন হবে। ফলে বৈদেশিক
ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার জন্য ডলারের সংস্থানে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ওপরই নির্ভর করতে হবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের জোগান দিতে থাকলে রিজার্ভ কমে
যাবে।
সূত্র
জানায়, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায়
বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে দুটি খাতে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। যা বাংলাদেশের কোটার
চেয়ে কম। কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৫৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পেতে পারে। এ
ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করতে গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের মিশন
বাংলাদেশ সফর করেছে। ওই সময়ে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক
সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের
সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে বৈদেশিক ঋণের আলোচ্য বিষয়টি উঠে এসেছে।
সূত্র
জানায়, আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের
ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। এতে কোন সময়ে কত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে
এবং ওইসব ঋণ পরিশোধের জন্য ডলারের সংস্থান কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে উল্লেখ থাকবে।
একই সঙ্গে এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কেমন চাপ তৈরি হবে সে বিষয়েও তাদের
জানাতে হবে।
সূত্র
জানায়, আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি আগামী মার্চের মধ্যে পাওয়া যাবে। এরপর থেকে
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণও পাওয়া যাবে। ঋণের অর্থ মূলত আমদানির ব্যয়
মেটাতেই কাজে লাগানো হবে। ফলে আমদানি মার্চ পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ দিয়ে আমদানি
ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি শোধ করতে হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয়
ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ব্যাকি টু ব্যাক এলসির দেনা
পরিশোধের সময় এক বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে দেনা পরিশোধের চাপ কমে যাবে।
বাংলাদেশ
ব্যাংক মনে করে, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই। কিছুটা চিন্তা আছে
স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে। তবে রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে এমন খাতের বৈদেশিক ঋণ
নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কেবল সেবা ও বাণিজ্য খাতের কিছু নিয়ে সমস্যা আছে। এগুলো
পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র
জানায়, সরকারি সংস্থাগুলোতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩৯ কোটি ডলার। গত ছয় মাসের ব্যবধানে এ
ঋণ ১৩ শতাংশ কমেছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৬৩৪ কোটি ডলার। এ ঋণ সাড়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে
সরকারি খাতে মোট ঋণ ৬৭২ কোটি ডলার। আগের চেয়ে এ ঋণ ৩ শতাংশ বেড়েছে।
বেসরকারি
খাতে ঋণ স্বল্পমেয়াদি ঋণ ১ হাজার ৬২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে বায়ার্স ক্রেডিট ৮২১
কোটি ডলার। এটি পরিশোধের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ
৪৪৬ কোটি ডলার। এগুলো পরিশোধ করতে হবে পর্যায়ক্রমে।
২০২০ সালে
স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৯১৪ কোটি ডলার ছিল। গত এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে
স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। মূলত করোনার সময়ে স্বল্পমেয়াদি
বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করায় এ খাতে ঋণ দ্বিগুণ বেড়েছে। একই কারণে
স্থগিত বৈদেশিক এলসির দেনা পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২০ সালে এ ঋণ ছিল ৫৮ কোটি
ডলার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ কোটি ডলারে।