ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর দাবি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির

রেস্তোরাঁ খাতকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার
স্বার্থে এবং এ খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হয়রানী থেকে রক্ষা করতে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস
চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর
প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ
করেন সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, বর্তমানে রেস্তোরাঁ খাত পরিচালনা করার
জন্য কমবেশী ১১টি সংস্থার অধীনে কাজ করতে হয়। এই ১১টি সংস্থায় প্রতিবছর নতুন করে লাইসেন্স
বা নবায়নে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা অনেক হয়রানীর শিকার হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হন। আমরা মনে করি এতোগুলো প্রতিষ্ঠানের
কাছে না গিয়ে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের ন্যায় একটি মন্ত্রণালয়/সংস্থা/
অধিদপ্তর থেকে সব অনুমতি প্রদান করা হোক। অবিলম্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে একটি মন্ত্রণালয়ের
মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। নবায়নের ক্ষেত্রে সকল ছাড়পত্র প্রতি বছরের পরিবর্তে ০৩ (তিন)
বছর মেয়াদী করা হোক।
এদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের
মর্যাদা প্রদানের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতের মধ্যে
অন্যতম রেস্তোরাঁ খাত। এ খাতে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে।
সরকারি হিসেবে দেশে ৪ লক্ষ্যের বেশী রেস্তোরাঁ পরিচালিত হয়ে আসছে যেখানে ৩০ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী
কাজ করছে। কৃষি, পর্যটন, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের সব ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে
এই খাত। কিন্তু সরকারিভাবে রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা না দেওয়ায় চরম অবহেলিত
অবস্থায় পড়ে আছে। কাজেই অবিলম্বে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা প্রদান করতে
হবে।
সমিতির নেতারা বলেছেন, ভ্রাম্যমাণ
আদালতের নামে সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছেন আমলারা। সরকারি সাতটি সংস্থা
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট
নীতিমালা তৈরির দাবি জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতারা।
এ সময় সরকারের কাছে আরো কিছু দাবি
তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, সারা বাংলাদেশে স্ট্রিট ফুড থেকে শুরু করে যেকোন রেস্তোরাঁ
ভ্যাটের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হবে যাতে কোনো ব্যবসায়ীক
বৈষম্য থাকবে না। এতে ব্যবসায় অসম প্রতিযোগিতা হবে না।
ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবনা
হচ্ছে, সকল খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। পণ্যের মূল্যের
সাথে ভ্যাট সংযুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করার নতুন আইন বাদ দিতে হবে। ব্যবসার স্থাপনা,
বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানি বিল সহ অন্যান্য ক্রয়কৃত পণ্যে এবং সেবা যেখানে ভ্যাট
প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোকে উপকরণ বিবেচনা করে আদায়কৃত ভ্যাটের ৫০% রেয়াত সুবিধা প্রদান
করতে হবে। আয়কর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে রেস্তোরাঁ খাতে মোট বিক্রয়ের উপর ৩৫%
থেকে ৪০% গ্রস লাভ ধরা হয়। গ্রস লাভের এক তৃতীয়াংশ অন্যান্য খরচ বাদ দেওয়া হয় যা অস্থিতিশীল
ও নিয়ন্ত্রনহীন বাজারে কখনোই সম্ভব হয় না। আমরা মোট বিক্রয়ের উপর ২০% গ্রস লাভ এবং
দুই-তৃতীয়াংশ খরচ ধরে আয়কর মূল্যায়নের প্রস্তাব রাখছি অথবা বাৎসরিক মোট টার্নওভারের
উপর ১.৫% কর সরাসরি আরোপ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের করতে পারলে ভ্যাটের
সাথে আয়কর সমন্বিত হবে, করদাতার হয়রানী কমবে এবং আয়কর আট থেকে দশগুন বেড়ে যাবে।
ইএফডি মেশিন সর্বত্র দিতে হবে এবং
যেহেতু ইএফডি মেশিন সরকার তার রাজস্ব আহরণে ব্যবহার করবে তাই এর জন্য কোন ফি নেয়া যাবে
না। রেস্তোরাঁ খাতে সম্পূরক কর বাদ দিতে হবে।
হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের স্টাফদের
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এজন্য নিরাপদ
খাদ্যের অধীনে সমস্ত সংস্থাকে একসাথে এনে প্রথমে একটা নীতিমালা তৈরী করতে হবে। সেই
নীতিমালাটা আগে সমস্ত রেস্তোরাঁ মালিককে দিতে হবে এবং তাদেরকে জেলা ও থানাভিত্তিক ভাগ
করে করে স্লট করে করে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। ১৫ দিনের বা ০১ মাসের ট্রেনিং
হবে, মালিক-শ্রমিক সবাই এ ট্রেনিংয়ের আওতায় আসতে হবে। ট্রেনিংয়ে প্রদর্শিত নিয়ম-নীতি
ভঙ্গ করলে জরিমানা করতে হবে।
বাড়ি ভাড়া আদায় ও প্রদানের বিষয়ে
তারা বলেন, অধিকাংশ বাড়িওয়ালা-ই ভাড়াটিয়াদেরকে চরমভাবে হয়রানী করছে। ব্যবসা একটু ভালো
হলেই ব্যবসায়ীদের চরমভাবে হয়রানী করা শুরু করে। এজন্য সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো
বাড়ি ভাড়ার বিয়য়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরী করতে হবে।
ই-কমার্স প্রসঙ্গে তারা বলেন, টেকওয়ে,
পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারীর ক্ষেত্রে বর্তমান ই-কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী ডেলিভারী কোম্পানীগুলো
শুধু ডেলিভারী চার্জ নেওয়ার কথা, সেইখানে তারা ইচ্ছামত কমিশন চার্জ করছে। এজন্য সর্বোচ্চ
১০% কমিশন করে অতিদ্রুত একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কেননা এই নীতিমালা না হওয়ার কারণে দেশী বিদেশী কিছু প্রতিষ্ঠান আমাদের অনেক টাকা আটকিয়ে
দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে, এই সুযোগে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান চড়াওভাবে আমাদের মালিকদের উপর নেমেছে
যারা ৩৫-৪০% কমিশন নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারকে আবেদন জানাবো একটা টাস্কফোর্স টিম গঠন
করতে হবে যাতে আমাদের তৈরী করা গ্রাহক নিয়ে ই-কমার্স এর অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে
না পারে।
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেলে
হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনায় পড়ে। কেননা দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে আমাদের কর্মচারীদের
বেতন ও বাড়াতে হয়, আমাদের খরচ ও বেড়ে যায়। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সরকারী টিমকে আরো
শক্তিশালী ও বেগবান হতে হবে। যদি কোনো সুযোগ থাকে টিসিবির মাধ্যমে রেস্তোরাঁ খাতকে
বেসিক কিছু প্রোডাক্ট ন্যায্য দামে বরাদ্দ দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ খাত আরো শক্তিশালী
ভূমিকা রাখতে পারবে।
আমরা মনে করি ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের
৩০% লোক রেস্তোরাঁর খাওয়া-দাওয়া করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা যদি এগিয়ে যেতে পারি
তাহলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হবে, কর্মসংস্থান তৈরী হবে এবং দেশের জিডিপিতে আমরা উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা রাখতে পারবো।
সংবাদ সম্মেলনে রেস্তোরাঁ মালিক
সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, মহাসচিব ইমরান হাসান, প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন
সি.আই.পি, ১ম সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন মৃধা বেলু, ১ম যুগ্ম-মহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন,
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, ট্রেজারার তৌফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ
উপস্থিত ছিলেন।







