১২ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৬ গুণের বেশি: ইআরডি

আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে ১২ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি। আর এক বছরে বেড়েছে ছয় হাজার টাকার মতো। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ চার হাজার ৪০২ কোটি ডলার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এর আগে বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে
অবহিত করে প্রতিবেদন দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের
মাথাপিছু ঋণ ২৬৬ দশমিক ৮ ডলার। টাকার অঙ্কে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬৭৮ টাকা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হিসাব অনুযায়ী,
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার বছরে বিদেশি ঋণ ছিল ৭১২ কোটি ডলার। গত বছর মাথাপিছু
এই ঋণ ছিল ১৭ হাজার ১৩৬ টাকা। অবশ্য ঋণ আকারে বাড়লেও মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির তুলনায়
বাড়েনি খুব একটা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ছিল জিডিপির
১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বর্তমানে তা ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের
গতি বাড়ার কারণে এটি হয়েছে বলে জানান সচিব।
তিনি বলেন, ‘তার মানে আমাদের
ডোমেস্টিক ইনভেস্টমেন্ট (অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ) অনেক বেড়ে গেছে।’
সচিব আরও জানান, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ঋণের
পরিমাণ ছিল ৭৪ কোটি ডলার। বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগের এক ভাগ ঋণ হলেও তখনকার জিডিপির
তুলনায় ঋণ ছিল ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ঋণ বাড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায়
তা ঝুঁকি তৈরি করবে না বলে মন্তব্য করেন সচিব।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিসীমা হলো
আমাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ যখন জিডিপির ৪০ শতাংশ বা তার উপরে চলে যায়। কিন্তু ২০২০
সালে আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছি
জিডিপির ৫ দশমিক ৫ ভাগ।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০ শতাংশ পর্যন্ত
সেফটি রেঞ্জ থাকে। আমরা অনেক নিচে আছি। সুতরাং আমাদের ঝুঁকি নাই। বাংলাদেশ কখনও বিদেশি
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। এটা একটা বড় সাকসেস।’
যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ তাতে কোনো সমস্যা
দেখছেন না বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী
পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনুসরও।
তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু জাতীয়
আয়ও বাড়ছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বাড়লে অসুবিধার কিছু নেই। তবে এখন
যেহেতু সরকারের রাজস্ব আয় তুলনামূলক কম, সেহেতু ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারকে কিছুটা
অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হতে পারে।’
আগে অনুদান আসত বেশি, এখন কম
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার
পরপর ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে বিদেশি অনুদান এসেছে বেশি, ঋণ এসেছে কম। তখন বিদেশি অর্থায়নের
৮৫ শতাংশ এসেছে অনুদান হিসেবে। ঋণ ছিল ৮ শতাংশ।
তবে বাকি ৭ শতাংশ কোন হিসেবে এসেছে, তার
ব্যাখ্যা দেননি সচিব।
সেই অবস্থাও এখন ঘুরে গেছে। এখন অনুদান
আসে ঋণের অনেক কম।
আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় দফা ক্ষমতা গ্রহণের
বছরে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিদেশি অর্থায়নের ৩০ শতাংশ এসেছে অনুদান হিসেবে। আর ঋণ হিসেবে
এসেছে ৭০ শতাংশ।
১০ বছরে অনুদানের পরিমাণ আরও কমেছে। ২০১৮-১৯
অর্থবছরে অনুদানের পরিমাণ গিয়ে ঠেকে ৫ শতাংশে। আর ঋণের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান আরও কমে দাঁড়ায়
তিন শতাংশে। আর ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ শতাংশে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা ত্রাণের
ওপর অতটা নির্ভরশীল নই। নিজস্ব দক্ষতার ওপর নির্ভর করছি।’
কার কাছ থেকে কত ঋণ
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, যত বৈদেশিক ঋণ
তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিশ্বব্যাংকের কাছে। আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা থেকেই মোট ঋণের
৩৭ শতাংশ নিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক।
মোট বিদেশি ঋণের ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ নেয়া হয়েছে এই সংস্থা থেকে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপানি উন্নয়ন ও সহযোগিতা
সংস্থা জাইকার অবদান ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপকভাবে
অর্থায়ন করা চীনের অবস্থান জাইকার তিন ভাগের এক ভাগের কিছু বেশি। মোট বিদেশি ঋণের ৬
দশমিক ৮১ শতাংশ নেয়া হয়েছে চীন থেকে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পরমাণু
বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নের কারণে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চমে উঠে এসেছে। এক লাখ কোটি টাকার
বেশি প্রকল্পে অর্থায়ন করা দেশটি থেকে বাংলাদেশ মোট ঋণের ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ নিয়েছে।
মোট বিদেশি ঋণের ১ দশমিক ৩ শতাংশ নেয়া
হয়েছে প্রতিবেশী ভারত থেকে। অন্যসব দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ
ঋণ।







