দামে ছাড় দিয়েও তেমন ক্রেতা মিলছে না

প্রত্যাশার অর্ধেক পোশাকও বিক্রি হচ্ছে না এবারের ঈদে। দেশীয় পোশাকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফইএবি) এমন তথ্য জানিয়েছে। একই রকম তথ্য এসেছে এই সংগঠনের বাইরের সাধারণ বিক্রেতাদের কাছ থেকেও।

ঈদুল আজহায় সারাদেশে সাধারণত কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকার দেশীয় পোশাক বিক্রি হয় বলে জানায় এফইএবি। এর মধ্যে ব্র্যান্ডের বাজার ৪০ শতাংশ, বাকিটা নন-ব্র্যান্ডের পোশাক।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এক বছর ধরে বেচাবিক্রির সূচক নিম্নমুখী। এই ঈদে ছাড় দিয়েও ক্রেতা মিলছে না। এভাবে চলতে থাকলে অনেক ফ্যাশন হাউস ও উদ্যোক্তাকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে।

ঈদ উপলক্ষে মৌসুম ও আবহাওয়া মাথায় রেখে নতুন নকশা, শৈলী, রং ও কাপড়ের পোশাক আনেন উদ্যোক্তারা। গরম ও বর্ষার কথা মাথায় রেখে অনেক ফ্যাশন হাউস এবার নীল, সাদা, সবুজ কন্ট্রাস্টকে প্রাধান্য দিয়েছে।

এবার পোশাক বিক্রি কম হওয়ার কয়েকটি কারণও জানিয়েছেন বিক্রেতারা। চলমান সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, বৈরী আবহাওয়া, দেশীয় ব্র্যান্ডে অতিরিক্ত ভ্যাট; সর্বোপরি ঈদের দীর্ঘ ছুটিকেও কারণ হিসেবে দেখছেন তারা। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক, বেইলি রোডের দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানে খোঁজখবর নিয়ে এমন মতামত পাওয়া গেছে।

শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানালেন, গত কোরবানির ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে এবার বিক্রির পরিমাণ ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কম। এ অবস্থায় দোকানের ভাড়া, কারখানার খরচ, ঠিক সময়ে কর্মচারীর বেতন দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তারা।

বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, পোশাক খাতে গত বছর থেকে মন্দা ভাব চলছে। নিয়মিত বেচাবিক্রিও কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে যাদের নিজস্ব নকশা, রং, কাপড় নিয়ে গবেষণা ও উৎপাদন ব্যবস্থা আছে, তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে।

অঞ্জনস-এর বেইলি রোড শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক জাহিদ হাসান জানান, গত কোরবানির ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে এবার বিক্রি ৫০ ভাগ কম। এই ঈদের শেষ চার-পাঁচ দিন খুব বেশি বেচাবিক্রি হয় না। তখন গরু কেনা নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকেন। ফলে সামনের কয়েক দিন ভালো যাবে এমন আশা করার সুযোগ নেই।

গতকাল দুপুর ১টার দিকে ইয়োলোর বেইলি রোড শাখায় গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা পোশাক দেখছেন। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে তিনজন ক্রেতাকে পোশাক কিনতে দেখা যায়। বিক্রয় প্রতিনিধি সারওয়ার জানালেন, বেচাকেনা খুবই কম।

কে ক্র্যাফটের বসুন্ধরা সিটির ব্যবস্থাপক আমানুল্লাহ খান বলেন, আমরা রকমারি পোশাক এনেছি। তবে বিক্রি আশানুরূপ না। একই মার্কেটের দেশাল ব্র্যান্ডের ব্যবস্থাপক খায়রুল ইসলাম বললেন, এবারও আমরা পোশাকের নকশা ও রঙে বৈচিত্র্য এনেছি। তবে যাদের জন্য এনেছি, সেই ক্রেতাই তো নেই! দেশীয় ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ ও সাদাকালোর বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন, বিক্রি ভীষণ খারাপ।

অন্যমেলার বিক্রয় নির্বাহী শাওন ত্রিদেব বলেন, বিক্রির যে অবস্থা তাতে ঈদ মনেই হচ্ছে না। নির্দিষ্ট পণ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। এরপরও ক্রেতা নেই।

ফ্যাশন হাউস ট্রেন্ডজের বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক আরিফ তরফদার বলেন, এত খারাপ অবস্থা আর দেখিনি। ৬০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছি না। একই রকম বললেন শিশুদের পোশাকের ব্র্যান্ড শৈশবের শাখা ব্যবস্থাপক তুষার মাহমুদ। এ ব্র্যান্ডশপে চলছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এরপরও তেমন ক্রেতা নেই।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিকেও দায়ী করছেন বিক্রেতারা। আবার ঈদে দীর্ঘ ছুটি পাওয়ায় অনেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন, অল্প ছুটি পেলে তারা হয়তো যেতেন না। বাড়িতে আসা-যাওয়াসহ বাড়তি খরচ আছে। এসব কারণে মানুষ পোশাক কেনা কমিয়েছে।

দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) সভাপতি ও সাদাকালোর কর্ণধার আজহারুল হক আজাদ সমকালকে বলেন, দেশীয় পোশাকের সুরক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো বাজেটে বিদেশি পোশাক আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে আমাদের ওপর ভ্যাট চাপানো হলো (৭.৫% থেকে ১০%)। এভাবে দেশীয় উদ্যোক্তারা টিকতে পারবে না। আমরা সরকারের কাছে আর্থিক নয়, নীতিগত প্রণোদনা চাই। এমন নীতিমালা করা হোক, যেন দেশীয় পোশাক খাত সুরক্ষিত থাকে।