বাড়তি করের বোঝা মধ্যবিত্তের কাঁধেই
মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত
মানুষ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার ঘোষিত বাজেটে নিজেই তা স্বীকার
করেছেন। তার পরও আগামী অর্থবছরে আয়ের ওপর যে কর দিতে হবে, সেখানে এখনকার চেয়ে ২৯
শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে। এই চাপের বেশির ভাগই পড়বে মধ্যবিত্তের ওপর। অথচ
মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে প্রায় ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ১০
থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে সরকার।
এবারের বাজেটে ২০২৬-২৭ করবর্ষের জন্য ব্যক্তি
শ্রেণির করদাতাদের কর ধাপ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আয়ের ওপর যা
প্রযোজ্য হবে। আগামী মাস থেকে অর্থবছরটি শুরু হচ্ছে। বর্তমানে সাড়ে ৩ লাখ টাকা
পর্যন্ত আয় করমুক্ত। এর ওপর ১ লাখ অর্থাৎ সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ
করহার রয়েছে। আগামী আয়বর্ষে করমুক্ত আয়সীমা বেড়ে হবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার। এর ওপর তিন
লাখ টাকা আয় থাকলে ১০ শতাংশ কর আরোপ করেছেন। এতে করের বোঝা বাড়বে বর্তমানের সাড়ে ৪
লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের মানুষের।
আবার করমুক্ত আয়সীমার বেশি বর্তমান করদাতাদের যারা
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার বাস করেন, তাদের ন্যূনতম ৫ হাজার
টাকা। তবে অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার সর্বনিম্ন কর ৪ হাজার টাকা। সিটি করপোরেশনের
বাইরের করদাতাদের ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা। আগামী আয়বর্ষে এলাকা নির্বিশেষে
ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। এতে বাড়তি কর দিতে হবে অনেককেই। আয়কর পদক্ষেপের পাশাপাশি
পণ্য ও সেবায় ভ্যাট এবং অন্যান্য শুল্ক বাড়ানোর বেশ কিছু পদক্ষেপ রয়েছে বাজেটে, যা
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে।
যেভাবে কর বোঝা বাড়ছে
নতুন কর ধাপের কারণে বার্ষিক সাড়ে ৭ লাখ টাকা
থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা বা মাসিক সাড়ে ৬২ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার ৮৩৩ টাকা মাসিক
আয়ের ব্যক্তিদের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এতে তাদের কর
বাড়বে ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া মাসিক ৯৫ হাজার ৮৩৩ টাকা থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা
আয়ের ব্যক্তিদের কর হার ১৫ শতাংশের বদলে ২০ শতাংশ কর দিতে হবে। এতে এদের কর বাড়বে
২২ শতাংশ। আবার মাসিক ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৭ টাকা আয়ের
ব্যক্তিদের ২০ শতাংশের স্থলে ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এদের কর হার বাড়বে ১৯
শতাংশ।
কর কাঠামোর বৈষম্য
গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, নতুন কাঠামো উচ্চবিত্তের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও
মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য চাপ তৈরি করবে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে কর বৃদ্ধির ফলে তাদের সঞ্চয় বা ব্যয়ের সুযোগ
কমে যাবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন
আহমেদ বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়ার বলেছেন, আয়ের ধাপ উঠিয়ে নেওয়ায় মধ্যবিত্ত ও বিশেষ
করে চাকরিজীবীদের করের বোঝা আগামী অর্থবছর থেকে আরও বেশি বহন করতে হবে।
ভ্যাট ও শুল্কের কারণেও চাপে মধ্যবিত্ত
ঘোষিত বাজেটে কিছু কোম্পানির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কর হার কমিয়েছে সরকার। কিছু
ক্ষেত্রে ভ্যাট ও শুল্কও কমানো হয়েছে। এসব পণ্য কেনায় মধ্যবিত্ত মানুষ কিছুটা
স্বস্তি পাবে।
তবে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার,
হাইজিন ও টয়লেট সামগ্রীতে ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। মোবাইল
ফোন, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার
ইত্যাদির ওপর ভ্যাট ছাড় কিছুটা কমানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দামও বাড়তে পারে।
প্রসাধনী ও বিলাসবহুল পণ্য লিপস্টিক, ফেসওয়াশ, চকলেট ইত্যাদির আমদানি শুল্কের
ন্যূনতম মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। রড ও স্টিলের ওপর
ভ্যাট ২০ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রতি টনে দাম প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা
বাড়তে পারে।
ফলে কিছু পণ্যে ভ্যাট বা শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া
হলেও বা কমানো হলেও অন্য অনেক পণ্যে বাড়ানোয় শেষ পর্যন্ত আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি
করতে গিয়ে হোঁচট খাবেন তারা।