বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের স্থপতি
১৯৭৬
সাল। মুক্তিযুদ্ধের চার বছর অতিক্রান্ত
হয়েছে কিন্তু হতদরিদ্র বাংলাদেশের চেহারা পাল্টায়নি। বরং চারপাশে হতাশার
চিহ্ন। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই স্বপ্নগুলো ক্রমশ
ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
মানুষ
দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত, মনে হচ্ছিল হেনরি
কিসিঞ্জার কিংবা মার্কিন অর্থনীতিবিদের সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোই যেন বাংলাদেশের
ক্ষেত্রে অমোঘ নিয়তি হয়ে
দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পর মার্কিন অর্থনীতিবিদরা
বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যের মডেল।’
তাঁরা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে ‘দুর্ভিক্ষের প্রতীক’। স্বাধীনতার পর
বাংলাদেশ চুয়াত্তরে এক ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের
অভিজ্ঞতা বরণ করে।
সেই
দুর্ভিক্ষের ক্ষত এখনো শুকায়নি।
স্বপ্নহীন, বিবর্ণ হতদরিদ্র মানুষের মানচিত্র যেন বাংলাদেশ। ৭০
ভাগের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার
নিচে বাস করে। বাংলাদেশ
টিকবে কি না, বাংলাদেশ
কি ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের মডেল রাষ্ট্র হবে
নাকি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের
তকমা নিয়ে শেষ পর্যন্ত
বিশ্বের মানচিত্র থেকে বিদায় নেবে-
এ নিয়ে তখনো চলছে
নানা আলোচনা।
ঠিক
এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
এক উদ্যমী তরুণ শিক্ষক গ্রামীণ
অর্থনীতি পাল্টে দেওয়ার এক স্বপ্নকে বুকে
ধারণ করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ
করলেন। তাঁর উদ্যোগ ছিল
খুব ছোট, কিন্তু স্বপ্ন
ছিল বিশাল। ১৯৭৬ সালে ড.
মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কয়েকজন সহকর্মী
এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে গেলেন
চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত জোবরা গ্রামে। উদ্দেশ্য একটি গবেষণা। তিনি
বুঝতে চাইলেন গ্রামীণ দারিদ্র্যের কারণ এবং তার
উত্তরণের পথ।
গ্রামের
গরিবদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা
যায় কি না। তাদের
যদি ঋণ দেওয়া যায়
সেই ঋণ প্রদানের ফলাফল
কী হবে? তারা ঋণের
টাকায় কি সঠিক প্রয়োগ
করবে নাকি সে টাকা
খরচ করবে ভাত-কাপড়ের
জন্য। বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ গ্রহণ অত্যন্ত
জটিল একটি বিষয়। এটি
মূলত তেলে মাথায় তেল
দেওয়ার মতো। ঋণ দেওয়ার
জন্য লাগে জামানত বা
কোল্যাটারাল সিকিউরিটি। গ্রামের গরিব মানুষের এ
ধরনের কিছুই নেই। তাদের শুধু
আছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি, সাহস, উদ্যম। দরিদ্র মানুষের কর্মশক্তি এবং সৃজনশীলতাকে পুঁজি
করে সেটিকে জামানত হিসেবে বিবেচনা করে তাকে ঋণ
দেওয়ার কথা প্রচলিত ব্যাংকিং
ব্যবস্থায় কেউ কল্পনাও করতে
পারেনি। কিন্তু ড. ইউনূস সেই
জোবরা গ্রামে গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণের একটি নতুন
ধারার সূচনা করলেন। এ গবেষণা থেকে
তিনি যেমন উৎসাহিত হলেন,
উৎসাহিত হলো ওই শিক্ষার্থীরা
এবং গ্রামের মানুষ। সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা
পেলে গরিব মানুষ তাদের
নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। ঋণ
শোধের ক্ষেত্রে অনেক বড় বড়
ব্যক্তির চেয়েও তারা অনেক বেশি
তৎপর, আগ্রহী- এটি প্রথম আবিষ্কার
করলেন ড. ইউনূস। আর
এখান থেকেই উদ্দীপ্ত হয়ে শুরু হলো
তাঁর গ্রামীণ জনপদের ভাগ্য বদলের গল্প। বাংলাদেশে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূর করার ক্ষেত্রে
অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে, যে বাংলাদেশকে মনে
করা হতো দারিদ্র্যের রোল
মডেল, যে বাংলাদেশকে মনে
করা হতো একটি ক্ষুধা
দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে
গবেষণার বস্তু হবে, সেই বাংলাদেশ
দারিদ্র্য বিমোচনে এক অনন্য সাফল্য
অর্জন করল। এ সাফল্যের
মূল কারিগর হলেন ড. মুহাম্মদ
ইউনূস। ১৯৭৬ সালে এ
গবেষণার মাধ্যমে তিনি আস্তে আস্তে
গ্রামীণ জনপদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের
ধারণার সূচনা করেন। এরপর তিনি সরকারের
কাছে যান তাঁর দারিদ্র্য
বিমোচনের আবিষ্কার নিয়ে। গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণার কথা সরকারের অনেকেই
মানতে রাজি হননি। কোল্যাটারাল
সিকিউরিটি বা জামানত ছাড়া
ঋণ দেওয়া প্রচলিত ধারণায় নিরাপদ নয়। এটিকে অনেকে
অবাস্তব একটা পরিকল্পনা হিসেবেও
বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস
হতোদ্যম হওয়ার পাত্র নন। তিনি তাঁর
চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন এবং তাঁর অক্লান্ত
পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ১৯৮৩
সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার
‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইন
তৈরি করল। যাত্রা শুরু
হলো গ্রামীণ ব্যাংকের। সেই সময় মাত্র
৩ কোটি টাকার মূলধন
নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। এর
মধ্যে ১ কোটি ৮০
লাখ টাকা দিয়েছিল সরকার।
আর ১ কোটি ২০
লাখ টাকা ছিল ঋণগ্রহীতাদের।
এখান থেকেই শুরু। তারপর আর পেছনে ফিরে
তাকাতে হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক কেবল বাংলাদেশ এবং
সারা বিশ্বের গরিব মানুষের জন্য
জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করে
না, বরং গ্রামীণ ব্যাংক
বাংলাদেশ এবং বিশ্বের দরিদ্র
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান।
গ্রামীণ ব্যাংকের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি
হলো এ ব্যাংকের সদস্যপদ
প্রাপ্তির প্রধান যোগ্যতা হলো তাকে নারী
হতে হবে। এর মাধ্যমে
তিনি নারীর ক্ষমতায়নকে সামনে নিয়ে এসেছেন। নারীর
ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান হলো
অর্থনৈতিক মুক্তি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের
অন্যতম চাবি। ১৯৮৪ সাল থেকে
গ্রামীণ ব্যাংক আস্তে আস্তে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামের মূল শক্তিতে পরিণত
হয়। এর নেপথ্যের নায়ক
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই গ্রামীণ ব্যাংকের
বহুমাত্রিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সুবিন্যস্ত গ্রামীণ
অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। যা
দেশের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন গ্রামীণ ব্যাংক
কেবল ক্ষুদ্রঋণ দেয় না, দারিদ্র্যের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী তৈরি করে। তৈরি
করে আধুনিক শিক্ষিত, কর্মক্ষম মানুষ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন একজন বিরল
ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু অর্থনৈতিকভাবে
গ্রামীণ জনপদকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেননি,
বরং সার্বিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচন এবং গ্রামীণ কল্যাণের
জন্য কাজ করেছেন। আর
সেজন্যই তিনি তাঁর নিজের
জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। সারাক্ষণ চিন্তা করছেন এবং তাঁর চিন্তার
বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তিনি যখন দেখলেন
যে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি আস্তে
আস্তে গ্রামীণ জনপদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একের পর
এক নানামুখী উদ্যোগ নিলেন। কারণ তিনি বুঝতে
পারেন দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য দরকার দক্ষতা
বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের নানা
পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া। দারিদ্র্য
বিমোচনের সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে গড়ে
তোলেন ২৮টি বিভিন্ন রকম
প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র
কাজ হলো গ্রামীণ জনপদের
দারিদ্র্য বিমোচন এবং সর্বজনীন উন্নয়ন।
এসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল
বিভিন্ন প্রকল্প এবং উদ্যোগ গ্রহণ
করে গ্রামীণ জনপদের বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের
সামগ্রিক এবং সমন্বিত উন্নয়ন
সাধন করা। মাঠে কাজ
করতে গিয়েই ড. ইউনূস আবিষ্কার
করেন যে, শুধু ঋণ
প্রদানের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব নয়। দারিদ্র্য বিমোচনে
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ নানারকম উদ্যোগ সমন্বিতভাবে গ্রহণ করা দরকার। এর
অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সালের ২৫
এপ্রিল গঠিত হয় ‘গ্রামীণ
কল্যাণ’। এর মাধ্যমে
গ্রামীণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
গড়ে তোলা হয়। এর
মধ্যে ছিল গ্রামীণ টেলিকম,
গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ নেটওয়ার্ক লিমিটেড, গ্রামীণ বিকাশ, গ্রামীণ আইটি পার্ক, গ্রামীণ
ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, গ্রামীণ সল্যুশন, গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেড, গ্রামীণ
হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লিমিটেড, গ্রামীণ ফেব্রিক অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। একটু
লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, প্রত্যেকটি
প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল
‘শূন্য দারিদ্র্যতা’। দারিদ্র্যের শৃঙ্খল
থেকে মানুষের মুক্তি। আজ যে বাংলাদেশের
গ্রামে গ্রামে বদলে যাওয়ার গল্প,
সেই গল্পের স্রষ্টা আসলে ড. ইউনূস।
দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা
ড. ইউনূসই প্রথম অনুধাবন করেন। এজন্য তিনি তৈরি করেছিলেন
গ্রামীণ টেলিকম, যেখানে গ্রামের নারীরা প্রায় বিনা খরচে তথ্যপ্রযুক্তির
মাধ্যমে এবং টেলিফোন ব্যবহার
করে তাদের যেমন অর্থনৈতিক কর্মসংস্থানের
ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন, তাদের কাজগুলোকে সহজে এগিয়ে নিতে
শুরু করেন। গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে পরবর্তীতে নরওয়ের টেলিনর কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যাত্রা শুরু
করে ‘গ্রামীণফোন’, যেটি বাংলাদেশে টেলিকম
শিল্পে একটি বিপ্লব। গ্রামীণফোনের
মাধ্যমেই বাংলাদেশে আসলে তথ্যপ্রযুক্তির নীরব
বিপ্লব ঘটেছে এবং যে বিপ্লবের
নেপথ্য নায়ক হলেন ড.
মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণফোন না হলে আজকে
সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তৃণমূলের উদ্যোক্তা
এবং বিশেষ করে নারীর কর্মসংস্থানের
যে বিস্তৃতি ঘটেছে সেটি সম্ভব হতো
না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস
চিন্তা করেছিলেন যে দারিদ্র্য থেকে
গ্রামীণ জনপদকে মুক্ত করার একটি বড়
উপায় হলো গ্রামের দরিদ্র
মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা
করা। এ কারণে তিনি
গ্রামীণ শিক্ষা প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। গ্রামীণ
ব্যাংকের কাজের মাধ্যমে ড. ইউনূস আবিষ্কার
করেন যে, গ্রামীণ জনপদের
মানুষের পোশাকশিল্পের কাজে তাদের একটা
সহজাত দক্ষতা রয়েছে। এ দক্ষতাকে কাজে
লাগানোর জন্য গঠিত হয়
গ্রামীণ নিটওয়্যার লিমিটেড। গ্রামীণ মানুষের হাতের কাজের সহজাত দক্ষতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে তৈরি
হয় ‘গ্রামীণ সামগ্রী’। প্রত্যন্ত অঞ্চলের
গরিব মানুষের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর
উদ্যোগে সহায়তার জন্য তিনি গ্রামীণ
আইটি পার্ক তৈরি করেন। তিনি
একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলেন যে, পুষ্টি এবং
স্বাস্থ্য নিশ্চিত না হলে তখন
ওই গ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না। এজন্যই
তিনি গ্রামের শিশুদের নিরাপদ এবং মানসম্মত খাদ্য
নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীণ
ডানোন ফুডস প্রকল্প হাতে
নেন। গ্রামীণ হেলথ সার্ভিসের মাধ্যমে
তিনি গ্রামীণ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার এক অভূতপূর্ব
মহতী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। আর গ্রামীণ ব্যাংকের
সদস্যের সন্তানরা যেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত
হয়, আগামী দিনে নেতৃত্ব গ্রহণ
করতে পারে সেজন্যই গ্রামীণ
স্টার এডুকেশন প্রকল্প কাজ করে চলেছে
নীরবে। গ্রামীণ কৃষিতে বিপ্লব আনার জন্য তিনি
প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ কৃষি
ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশে কৃষি এবং লাইভস্টক
খাতে নীরবে কাজ করছে এ
প্রতিষ্ঠানটি। গ্রামীণ ব্যবসা সেবা লিমিটেড, গ্রামীণ
বাইটেক লিমিটেড, গ্রামীণ সাইবারনেট লিমিটেড, গ্রামীণ নিটওয়্যার লিমিটেড, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, গ্রামীণ সল্যুশনস লিমিটেড, গ্রামীণ আইটি পার্ক লিমিটেড,
টিউলিপ ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড,
গ্লোব কিডস ডিজিটাল লিমিটেড,
গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লিমিটেড, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লিমিটেড, রফিক অটোভ্যান ম্যানুফ্যাকচারিং
ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রামীণ উদ্যোগ, গ্রামীণ শিক্ষা ও গ্রামীণ সামগ্রী
ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষকে দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। এসব প্রতিষ্ঠানের
পথ ধরে এগিয়ে এসেছে
আরও বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
বদলে গেছে বাংলাদেশের দৃশ্যপট।
এসব উদ্যোগের কারণেই আত্মকর্মসংস্থানে ভরপুর আজ গ্রামীণ জনপদ।
দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক অসাধারণ উদাহরণ
আজ বাংলাদেশ। আর এ যুদ্ধের
বিজয়ী অধিনায়কের নাম ড. মুহাম্মদ
ইউনূস। এক নিভৃতচারী স্বপ্নদ্রষ্টা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আমরা
যদি এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম
একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা
যাবে যে, এর মাধ্যমে
ড. মুহাম্মদ ইউনূস একদিকে যেমন দারিদ্র্য বিমোচন
করেছেন, অন্যদিকে তিনি গ্রামীণ জনপদের
মানুষকে নানারকম কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাদের যুক্ত করেছেন পরিবর্তিত বিশ্বের অগ্রগতির সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি তরুণ এবং
নারীদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজের ব্যবস্থা
করেছেন এসব প্রকল্পের মাধ্যমে।
গ্রামের তরুণরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হবেন, তারা চাকরি দেবেন
এবং মুনাফার টাকা দিয়ে বিভিন্ন
সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, মানবকল্যাণ করবেন। এরকম একটি ধারণা
থেকেই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে
উঠেছে। তিনি একদিকে যেমন
কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্য গ্রামীণ
শক্তির মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে
তুলেছেন, তেমনি গ্রামীণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। আজকে ৪৯ বছর
পর এসে যখন জোবরা
গ্রামে ইউনূসের এই ক্ষুদ্রঋণের গবেষণার
কথা আমরা স্মরণ করি,
তখন আমরা দেখব যে,
এ ৪৯ বছরে বাংলাদেশে
কী বিপুল পরিবর্তন হয়েছে। বদলে যাওয়া এ
বাংলাদেশের আসল কারিগর হলেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এমন একজন
ব্যক্তি, যিনি গ্রামীণ জনপদের
দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পাল্টে দিয়েছেন। গ্রামীণ জনপদের যে দরিদ্র, হতদরিদ্র,
নিঃস্ব, দুর্ভিক্ষের চেহারা সেটি বদলে দিয়ে
তিনি এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের
বিকাশ ঘটিয়েছেন। আর এ কারণেই
তিনি গ্রামীণ জনগণের একমাত্র বন্ধু। গরিবের বন্ধু। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনিই সেনাপতি। আর যুদ্ধকে তিনি
শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বিশ্বের ৬৪টি দেশ এখন
গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণাকে গ্রহণ করেছে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের
এ ধারণা থেকেই আস্তে আস্তে গড়ে উঠেছে সামাজিক
ব্যবসার তত্ত্ব। যে তত্ত্বের মাধ্যমে
বিশ্বের অর্থনীতিতে এক বড় ধরনের
পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের মূল
কারিগর হলেন ড. মুহাম্মদ
ইউনূস।