১৯৭১ সালে ভারতের বিজয় দাবি মোদির প্রতিবাদ উপদেষ্টার
বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সোমবার ফেসবুক ও এক্সে পোস্ট করেছেন, ‘আজ বিজয় দিবসে, ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই। তাদের নিঃস্বার্থ আত্মোৎসর্গ ও অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এ দিনটি তাদের অসাধারণ বীরত্ব ও অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে গভীরভাবে গেঁথে থাকবে।’
এই পোস্টের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া না জানালেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল মোদির পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের বিজয়ের দিন। ভারত ছিল এ বিজয়ের মিত্র, এর বেশি কিছু নয়।’
মোদির এই পোস্ট নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছেন, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।’
হাসনাত লিখেছেন, ‘যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশ বিজয়ী হয়: প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ান্নারের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গতকাল লোকসভার বক্তৃতায় জানান, যে বীর সেনাদের অনমনীয় সংগ্রাম সেই জয় এনে দিয়েছিল, তাদের তিনি প্রণাম জানাচ্ছেন। সেই সময়ে ভারতের যে আমনাগরিক বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে দেশের সেনা ও নেতৃত্বের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল, সেই মহান ভারতবাসীকে তিনি সম্মান জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্ব ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি।
কথা প্রসঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীকেও প্রণাম জানান তাঁর নাতনি প্রিয়াঙ্কা। তিনি মনে করিয়ে দেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর যখন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা নিদারুণ অত্যাচার চালাচ্ছে, তখন বাকি বিশ্ব শুধু দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও (প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন) তৎকালীন ভারত সরকার ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলাদেশকে রক্ষা করতে। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহস দেখিয়েছিলেন এবং এমন নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছেন; যা দেশটিকে বিজয়ী করে।’
বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ: মমতা
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার মনে আছে, দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলাম। আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। রোজই ভারত-চীন যুদ্ধের গল্প শোনাতেন। সেনাবাহিনীর কথা বলতেন। ১৯৬৫ সাল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, আমাদের সেনারা কীভাবে আত্মত্যাগ করেছিলেন। একইভাবে ১৯৭১ সাল, বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে আবার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ।’ গতকাল কলকাতার রেসকোর্সে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।