জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চাই গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানী শহরে অধিকাংশ নাগরিকের সকালটি কাটে আরাম-আয়েশে। কেউবা নতুন বিষয়ে জানার আগ্রহ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ঠিক এমনই এক শুক্রবারে জীববৈচিত্র্যের জন্য হাঁটা কর্মসূচিতে যোগ দিই। তাই আমাদের জন্য নভেম্বরের প্রথম দিনের সকালটা ভিন্নভাবে শুরু হয়। সকাল ৯টার মধ্যে সবাই রমনা পার্কে উপস্থিত হয়। সেখানে শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ ছিল। 
জীববৈচিত্র্য বলতে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাণের বৈচিত্র্যকে বোঝায়। যেখানে উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক ও ক্ষুদ্রজীবী প্রাণী একই বাস্তুতন্ত্রে বসবাস করে। এ ব্যবস্থায় একের সঙ্গে অপরে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এটি ভারসাম্যহীন হলে জীবচক্রে প্রভাব ফেলে। দলনেতা এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে গাছের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করেন। 

প্রত্যেক শিশুকেই চারপাশের গাছ সম্পর্কে জানানো দরকার। গাছ আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এটি আমরা কম-বেশি সবাই জানি। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টি হওয়া, মাটির ক্ষয়রোধ, খরারোধ, প্রাণের বাসস্থান, খাদ্যসংস্থানসহ অনেক ক্ষেত্রে গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি গবেষণা বলছে, বিশ্বে গাছের প্রজাতির তিন ভাগের এক ভাগই বিলুপ্তির পথে। এটি মানব জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা জাতীয় ফল কাঁঠাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম এবং গাছটিও দেখে নিলাম। সেদিন হয়তো না গেলে জানতে পারতাম না, কাঁঠাল গাছের বাকলের ভেতরে থাকা হলদে আস্তরের সঙ্গে চুন মেশালে নাকি রং তৈরি হয়। কদম গাছ চিনলাম, যার ফুলের পাপড়ি ঝরে গেছে। পাশেই ছিল সরু ও লম্বা একটি গাছ, যাকে রয়েল পাম বলা হয়। আবার দেখতে বোতলাকৃতির হওয়ায় একে বোতল পামও বলা হয়। হঠাৎ পাশের কড়ই গাছ বেয়ে কাঠবিড়ালিকে ওপরে উঠে যেতে দেখলাম। এটি গাছের ওপর একটি প্রাণীর নির্ভরশীলতার উদাহরণ।
মাটিতে একটি গাছের বেশ কিছু চারা জন্মেছে। পাখি ফল খেয়ে পুরীষ ত্যাগের পর হজম না হওয়া বীজ থেকে এই চারাগুলো জন্ম নিয়েছে। এভাবেই প্রাকৃতিক বন তৈরি হয়। এরপর আমাদের তেঁতুল ও আমলকী গাছের কাছে নেওয়া হলো। আমরা প্রায় সবাই ফল দুটি খেয়েছি, কিন্তু এই প্রথম গাছ চিনলাম। এগুলো ভিটামিন সি-এর চাহিদা মেটায়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের আলো ছড়িয়ে পড়ল। আমরা ভিটামিন-ডি পেলাম, এ শহরের মানুষের মধ্যে যার ঘাটতি রয়েছে। স্বর্ণচাঁপা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের তিন প্রকার চাঁপা সম্পর্কে জানানো হলো। হাঁটতে গিয়ে বড়দের সহায়তায় দেবদারু, ইউক্যালিপটাস গাছ চিনলাম। দলনেতা বকুল, তমাল, নাকফুল, বাওবাব ও জাকারান্ডা গাছ চিনতে সাহায্য করলেন। তিনি বলছিলেন, এক দেশের গাছ অন্য দেশে লাগালে ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অনেক দেশে এ নিয়ে কড়াকড়ি নিয়ম পালন করা হয়। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় বিমানবন্দরে কোনো যাত্রী অন্য দেশের গাছ বহন করছে কিনা, তা ভালোভাবে যাচাই করা হয়। তারপর আমরা পাউডার পাফ ফুলগাছের সঙ্গে পরিচিত হলাম, যা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি মোলায়েম। শেষে আমরা গেলাম সোনালু গাছের কাছে। দুটি ফুল ও ফল দেখতে পেলাম। ফুলগুলো ঝালরের মতো। সবুজের মাঝে হলুদ ফুলগুলো দেখতে স্বর্গীয় লাগছিল।

অনলাইনের বাইরে গিয়ে এভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অন্যরকম ছিল। অভিভাবকদের উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া। তাদের সন্তানদের সময় দেওয়া, জীববৈচিত্র্য ও গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা। সপ্তাহে একবার হলেও প্রকৃতির মাঝে নিয়ে যাওয়া। এই আয়োজনে অনেক অভিভাবক ছিলেন। অনেকেই নতুনভাবে কিছু গাছের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। আমরা সবার সঙ্গে মিলে আনন্দ নিয়ে গাছ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। 

দিন দিন যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তার জন্য আমরা হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে আমরা প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ বাস করি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু পারি ততটুকু করলেও আজ এ অবস্থা হতো না। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত সচেতন হওয়া ও আশপাশের সবাইকে সচেতন করে তোলা। নিজেদের সন্তানদের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে অবহিত করা। গাছ না কেটে রোপণে তাগিদ দেওয়া। এতে জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। আমরা একটি সবুজ ও সুস্থ পরিবেশ পাব।

মাহযাবীন রহমান প্রত্যয়: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকা