গুচ্ছ প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীবান্ধব হোক
২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হতো। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ভর্তি প্রক্রিয়া থাকায় একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে এতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ কষ্টসাধ্য ছিল। অনেক সময় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারত না।
দীর্ঘদিনের আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; পর্যায়ক্রমে প্রকৌশল, সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণে সম্মত হয়। অন্যান্য গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়ে তেমন কোনো সমস্যার কথা শোনা না গেলেও গুচ্ছভুক্ত ২২টি সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যার যেন অন্ত নেই।
সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করতে হচ্ছে। আবেদনে ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। আবেদনের পর মৌখিক সাক্ষাৎকার দিতে কিংবা ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়নের জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হচ্ছে। এতে বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করলে ভর্তি নিশ্চায়নের টাকা ফেরত পাচ্ছে না তারা। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথাসময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ক্লাস শুরু করতে পারছে না; এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু করেছে ২০২২ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি কিংবা আরও পরে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরুর আগে ভর্তি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে পারেনি। সেমিস্টার পরীক্ষা শুরুর মাসখানেক আগেও ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান থাকার খবর পাওয়া যায়। বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করেও নির্ধারিত আসন পূরণ করতে পারছে না অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। গুচ্ছ প্রক্রিয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন ফাঁকা থাকবে, এমনটা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা, আর্থিক ক্ষতিসহ বেশ কিছু কারণে আসন ফাঁকা রেখে ক্লাস শুরু করতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৭০-৮০ শতাংশ স্থানীয় কিংবা আশপাশের জেলা থেকে আসছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব কমছে।
গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ এবং সুবিধাজনক হবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। ভর্তি পরীক্ষার এ প্রক্রিয়াটি আরও সহজ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব হোক- এমনটাই চাওয়া শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়