চাহিদা হ্রাসে হিলি স্থলবন্দরে কমেছে পাথরের দাম

নতুন করে এলসি খুলতে না পারায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি অনেকটা কমে গেছে। আমদানি কমলেও দেশে পাথরের চাহিদা কমায় ক্রেতা সংকটে পাথরের বেচাকেনা কমে গেছে। টনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা দাম কমিয়েও পাথর বিক্রি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা, এতে লোকশানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিন হিলি স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে বন্দরে প্রচুর পরিমাণে আগের আমদানীকৃত পাথর স্তূপ আকারে পড়ে রয়েছে। কিন্তু পাথরের তেমন ক্রেতা বা বেচাকেনা লক্ষ করা যায়নি। এতে পাথরের দাম আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। আগে ৫/৮ আকারের পাথর ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা টন বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। ৩/৪ আকারের পাথর ৪ হাজার ৩০০ টাকা টন হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ২০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছিল। ১/২ আকারের পাথর আগে ৩ হাজার ৮০০ টাকা টন বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১/৪ আকারের পাথর আগে ৪ হাজার টাকা টন বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরে পাথর কিনতে আসা নিতাই চন্দ্র বলেন, আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে পাথর ক্রয় করে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্মের চলমান কাজে ব্যবহার করছি। কিন্তু রড সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ঠিকমতো কাজের বিল না পাওয়ায় আগের তুলনায় আমাদের কাজ কমে গিয়েছে। যার কারণে পাথরের দাম আগের তুলনায় কমলেও আমাদের কাজে পড়তা না হওয়ায় কাজ যেমন কমে গেছে, তেমনি পাথরের চাহিদা কমে গিয়েছে। এতে বন্দর থেকে পাথর ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি।

অন্য ক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় পাথরের দাম অনেকটা কমে গেছে কিন্তু আমরা যেসব প্রজেক্টে পাথর সরবরাহ করতাম, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই মোতাবেক পাথর কিনতে পারছি না। সেই সঙ্গে আগে বিভিন্ন বাসাবাড়ি তৈরিতে ভালো পাথরের চাহিদা ছিল কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়তির কারণে তারাও কাজ কমিয়ে দিয়েছেন।

পাথর আমদানিকারকের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ফার্মের পাথর আমদানি একেবারে কমে গেছে, যেখানে আগে শুধু আমাদের ৪০-৫০ ট্রাক পাথর আমদানি হতো, এখন সেখানে চার-পাঁচ ট্রাক পাথর ঢুকছে। আবার আমদানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পাথরের বেচাকেনাও কমে গেছে। পাথরের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। রড সিমেন্টসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না, এজন্য তারাও আমাদের নিকট থেকে পাথর নিচ্ছেন না। এতে বিক্রি একেবারে কম। পাথর বিক্রি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমদানিকারকরা পাথরের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তার পরও পাথর বিক্রি হচ্ছে না।

হিলি স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারক ইদ্রিস আলী মিঠু বলেন, নতুন করে এলসি খুলতে না পারায় আগের এলসি শেষের দিকে হওয়ায় বন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি কমে গেছে। অল্পকিছু পরিমাণে পাথরের পুরনো এলসি রয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে কিছুদিন পাথর আমদানির পর তা শেষ হয়ে যাবে। যদি দ্রুত এলসির সমস্যা সমাধান না হয়, পাথরের আমদানি বন্ধ থাকে, সেক্ষেত্রে পাথরের দাম বাড়তে পারে। অন্যান্য পণ্যের যেহেতু সীমিত পরিমাণে এলসি দিচ্ছে, তাই আমাদের দাবি পাথরের স্বল্প পরিমাণে এলসি দেয়া উচিত।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, কিছুদিন আগেও বন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি স্বাভাবিক ছিল। আমদানিকারকরা ব্যাপক পরিমাণে পাথরের এলসি খুলেছিল। কিন্তু হঠাৎ ব্যাংকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ছাড়া পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছিল। পাথর যেহেতু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে পড়ে না, এটা বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন ফার্মের কাজে ব্যবহার হয়, যা পরে হলেও চলবে। ফলে ব্যাংকগুলো পাথরের এলসি খুলতে বা দিতে নিরুৎসাহিত করেছিল। পুরনো যেসব পাথরের এলসি ছিল, শুধু সেসব পাথর দেশে আমদানি হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পাথর আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পাথরের আমদানি আগের তুলনায় একেবারে নিম্ন পর্যায়ে। আগে যেখানে বন্দর দিয়ে ৮০-১০০ ট্রাক পাথর আমদানি হতো, বর্তমানে তা কমে মাত্র ১০-১৫ ট্রাকে নেমেছে। মূলত বৈশ্বিক মন্দার কারণেই বন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি কমে গেছে। যেহেতু হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আহরণের প্রধান পণ্য হলো পাথর। আর পাথর আমদানি কমার কারণে সরকারের রাজস্ব যেমন কমেছে, তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় কমে গেছে। বন্দর দিয়ে ১-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আট কর্মদিবসে ১৭০টি ট্রাকে ৯ হাজার ৩১১ টন পাথর আমদানি হয়েছে।