প্রাইস ক্যাপ নয়, রুশ জ্বালানি আয়ে বৈশ্বিক মন্দাই বড় ঝুঁকি
রুশ জ্বালানি তেলের ওপর প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা) বেঁধে দেয়ার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। উদ্দেশ্য জ্বালানি পণ্য থেকে রাশিয়ার বৈদেশিক আয় তলানিতে নিয়ে আসা। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাইস ক্যাপ দেশটির জ্বালানি আয়কে যতটা না ঝুঁকির মুখে ফেলবে তার চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ফেলবে অর্থনৈতিক মন্দা। খবর রয়টার্স।
মন্দা পরিস্থিতির প্রভাবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, ডিজেল ও অন্যান্য পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য থেকে আয় কমে যাবে। আগামী বছর যদি অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে তা রাশিয়ার রফতানি আয় এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক কমতে পারে। গত দুই দশকের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
জি৭ এবং ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির ওপর প্রাইস ক্যাপ দিতে যাচ্ছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হতে পারে। আর অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের ওপর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাইস ক্যাপ কার্যকর হবে। দেশটির অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দেয়া ছাড়াই রফতানি আয় কমানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
২০০৪-২০২১ সাল পর্যন্ত রাশিয়া প্রতি বছর গড়ে ২২-২৬ কোটি টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য পরিসংখ্যান সূত্রে এ তথ্য জানা গিয়েছে।
২০০৪ সালে দেশটি ৮ কোটি ১০ লাখ টন জ্বালানি পণ্য রফতানি করেছিল। ২০১৬ সালে তা দ্বিগুণ বেড়ে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হয়। কিন্তু এর পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির রফতানি ১৪ কোটি ৫০ লাখ টনে আটকে ছিল।
জ্বালানি পণ্য রফতানি থেকে দেশটির আয় নির্ভর করে ব্রেন্টের বাজারদরে ওঠানামার ওপর। আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শটির ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ২০১১-২০১৩ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার রফতানি আয় ব্যাপক বেড়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে দেশটি ২৬ হাজার ৩০০ কোটি থেকে ২৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার আয় করে। কিন্তু ২০০৯ সালে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আয় কমে ১৪ হাজার কোটি ডলারে নেমে যায়।
রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন গত মাসে আবারো কমেছে। তবে কমে যাওয়ার এ হার চলতি মাসে ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ ইইউ রুশ জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।
গত মাসে রাশিয়া কনডেনসেটসহ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে দৈনিক ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন করে। এটি দৈনিক ১ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেলের সমান। সেপ্টেম্বরে উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ব্যারেল।
গত মাসে পাইপলাইন ও সমুদ্রপথে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানিও কমেছে। এ সময় দেশটি সব মিলিয়ে দৈনিক ৪৭ লাখ ব্যারেল করে রফতানি করেছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় রফতানি ২ শতাংশ কমেছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের পর এ খাত থেকে আয়ও বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। তবে সেপ্টেম্বর থেকেই রফতানিতে টান পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে রফতানি ব্যাপক হারে কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে পণ্যটির বৈশ্বিক সরবরাহ ঘাটতি চরম আকার ধারণ করবে।