দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় হাই-এন্ড পোশাকের দক্ষতা উন্নয়নের সম্ভাবনা

সরকারি আমলা ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদের ১৯৭৮ সালে কোরিয়ার দাইয়েয়ু কোম্পানির সহায়তায় পোশাক রফতানি শুরু করেন। এর মধ্য দিয়ে যাত্রা হয় রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে আরো কয়েকটি ফার্ম এগিয়ে আসে। তবে ১৯৮০-৮১ সালের আগ পর্যন্ত এ শিল্পের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বর্তমানে দেশে রফতানিমুখী সক্রিয় পোশাক কারখানার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। কর্মসংস্থান ৪০ লাখেরও বেশি, এমন দাবি খাতসংশ্লিষ্টদের।

দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় রফতানিমুখী পোশাক শিল্প থেকে বাংলাদেশ বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কিন্তু বাংলাদেশের সক্ষমতা মূলত কম দামের এবং কম মূল্য সংযোজন হয় এমন পোশাক পণ্য প্রস্তুতে। এখন বেশি দামের এবং বেশি মূল্য সংযোজন হয়, এমন পোশাক পণ্য প্রস্তুতে মনোযোগী হচ্ছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে আবারো সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।

পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন জানিয়েছে, গতকাল বিজিএমইএ কোরিয়া ফেডারেশন অব টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজের (কেওএফওটিআই) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এর মাধ্যমে পারস্পরিক ব্যবসা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন, বিশেষ করে দেশ দুটির পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে জোর দেয়া হবে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

সমঝোতা স্মারকের মধ্যে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং বাণিজ্যবিষয়ক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাতগুলোয় বিনিয়োগ, বিশেষ করে টেক্সটাইল, হাই-এন্ড পোশাক পণ্য, ওভেন টেক্সটাইল এবং পোশাক, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্ভাবন খাতগুলোয় কোরিয়া থেকে সরাসরি বিনিয়োগ অথবা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং কেওএফওটিআইয়ের চেয়ারম্যান সাং উন লি কোরিয়ার সিউলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক আসিফ আশরাফ, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সির (কেওটিআরএ) মহাপরিচালক জং ওন কিম, কোরিয়া ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিম সুং চ্যান, কেওএফওটিআইয়ের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান সোইয়াংজু, কোরিয়া টেক্সটাইল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ পরিচালক জুং-কি লি, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার, হ্যামস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমানসহ কোরিয়ার ফ্যাশন শিল্পের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএ এবং কেওএফওটিআইয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারককে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, এ সমঝোতা বাংলাদেশ ও কোরিয়ার জন্য, বিশেষ করে পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আরো বেশি পারস্পরিক বাণিজ্য সুবিধা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের জন্য একটি উদীয়মান বাজার। যেহেতু আমরা উদ্ভাবন, বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তিগত আপগ্রেডেশনকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির মূল কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি, তাই বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সহযোগিতা প্রকৃত অর্থেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফারুক হাসান সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব অংশগ্রহণকারীকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শক্তি ও সক্ষমতা তুলে ধরতে বিজিএমইএর উদ্যোগে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মেইড ইন বাংলাদেশ উইক এ অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান।