সরকার কঠোর হলে বড় কর্মসূচি দেবে বিএনপি
ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দশ ডিসেম্বরের ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১১ সাংগঠনিক জেলার বিভিন্ন ইউনিটে ইতোমধ্যে কর্মসভাও শুরু করেছে। ৯ বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ করার পর প্রত্যাশা অনুযায়ী বড় জমায়েত ঘটিয়ে দেশে ও বিদেশে সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে চায় দলটি। সেক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ করতে চায়। যা আগামীদিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে চলমান আন্দোলনে গতি আনতে নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করবে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, বাকি বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা না দিয়ে সরকার নমনীয় থাকলে বিএনপি হার্ডলাইনে যাবে না। সেক্ষেত্রে ঢাকার সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে আলটিমেটাম দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সরকার কঠোর হলে বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে। ‘রোডমার্চ’ কিংবা ‘লংমার্চের’ মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোনে যাবে।
জানতে চাইলে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকার
বাধা দেবে। কিন্তু সেই বাধা মানুষ মানবে না। যার প্রমাণ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও
খুলনার গণসমাবেশে জনস্রোত। তবে আমরা কোনো সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে রাজধানীতে
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় একটি মহাসমাবেশ করতে চাই। সেখান থেকে আমাদের পরবর্তী
কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।’
জানা গেছে,
ঢাকার মহাসমাবেশ নিয়ে নানা শঙ্কায় আছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে,
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সর্বশেষ শনিবার খুলনার গণসমাবেশে যেসব প্রতিকূল অবস্থা
মোকাবিলা করতে হয়েছে, অন্য বিভাগের চেয়ে ঢাকার সমাবেশে তার চেয়ে বেশি বাধা-বিপত্তি
মোকাবিলা করতে হবে। এ অবস্থায় সামনের কর্মসূচিগুলো কতটা শান্তিপূর্ণভাবে করা যাবে,
তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যেভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ
বাড়ছে তা সরকারকে চাপে ফেলেছে। এ অবস্থায় বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও দলীয়
নেতাদের সবাইকে শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে
সমাবেশ সুশৃঙ্খল করতে পাঁচশ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করবে। নজরদারি করতে
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনও ব্যবহার করবে।
দলটির
গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিগত সময়ে দেখা গেছে, বিএনপি হরতাল ডাকলে
ক্ষমতাসীনরা পরিবহণ মালিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করে, আবার সমাবেশ ডাকলে গাড়ি চলাচল
বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও খুলনা সমাবেশের আগে তা-ই দেখা গেছে। বিএনপি
নেতাদের ধারণা অবশিষ্ট বিভাগীয় গণসমাবেশ ও ঢাকার মহাসমাবেশের আগে গণপরিবহণ বন্ধ
করা হতে পারে, বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধার সম্মুখীন হতে
পারে, রাজধানীর আবাসিক হোটেলসহ সর্বত্র কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে। এই বিষয়গুলো
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় আছে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে
অনিচ্ছুক বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য যুগান্তরকে জানান, ‘সরকার
কঠোর হলে দশ ডিসেম্বর বিএনপি বড় কর্মসূচি দেবে। কঠোর না হলে দাবি আদায়ে একটি
আলটিমেটাম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত-অন্য বিভাগীয়
গণসমাবেশ যেভাবে হয়েছে, ঠিক একইভাবে ঢাকার মহাসমাবেশ হবে। তবে সরকারের গতিবিধির
ওপর যে কোনো সিদ্ধান্ত যে কোনো সময় চলে আসতে পারে। দেশের মানুষকে বাঁচাতে, সার্বভৌম
রক্ষায় যে কোনো সময় সরকার পতন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।’
বিএনপির
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, ‘তিনটি
বিভাগীয় গণসমাবেশের জমায়েত দেখার পর সরকারের মন্ত্রী-এমপির বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে,
তারা ক্ষমতা হারানোর শঙ্কায় আছেন। এ কারণে ক্ষমতাসীনরা কর্মসূচি পণ্ড করতে অজুহাত
খুঁজতে পারেন অথবা বিএনপিকে সহিংস করে তোলার উসকানি দিতে পারেন। সেই ব্যাপারে
বিএনপি সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।’
বিএনপির
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারকে
ঘৃণা জানানোর জন্য মানুষ প্রতিবাদী হয়ে আছে। সমাবেশ সফল করার জন্য বিভাগের
সর্বস্তরের নেতারা সেদিন ঢাকায় উপচে পড়বে। সরকারকে বাধা না দেওয়ার জন্য আহ্বান
থাকবে। তারপরও বাধা দিলে তা উপেক্ষা করেই সরকারকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে লাখ লাখ লোক
হবে।’
জানা গেছে,
সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগরসহ বিভাগীর সব সাংগঠনিক জেলায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা
শুরু করেছেন নেতারা। অন্যান্য গণসমাবেশ সফল করতে দলের পক্ষ থেকে যেসব নির্দেশনা
দেওয়া হয়েছে, ঢাকার ক্ষেত্রেও তা অপরিবর্তিত থাকবে। এসব নির্দেশনার মধ্যে
রয়েছে-সমাবেশের আগেই সংশ্লিষ্ট শহরে অবস্থান করা। আত্মীয় বা বন্ধুর বাসায় অথবা
হোটেলে অবস্থান করা। যাদের থাকার জায়গা নেই, তাদের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে রাখার
জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দূরের জেলা হলে সঙ্গে শুকনো খাবার ও অতিরিক্ত পোশাক নিয়ে
আসার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার নেতারা এসব বিষয় সমন্বয় করছেন।
গাজীপুর
জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন যুগান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশকে
কেন্দ্র করে যতই বাধা দেওয়া হোক না কেন, পুরো রাজধানী সেদিন সমাবেশে রূপান্তরিত হবে।
যে কোনো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করবে। এজন্য সাংগঠনিকভাবে
যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, তা করা হবে। হামলা-মামলা, হয়রানি-নির্যাতন কোনো
কিছুই আমাদের আটকাতে পারবে না।’
ঢাকা মহানগর
উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘মহাসমাবেশে মানুষের ঢল নামবে।
সব বাধা পার হয়ে মানুষ সমাবেশে আসবে। সেদিন ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। আমরা সমাবেশ সফল
করার জন্য ২৮ অক্টোবর থেকে থানাভিত্তিক ওয়ার্ডসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে
প্রস্তুতি সভা শুরু করব।’
মুন্সীগঞ্জ
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন বলেন, ‘গণসমাবেশে লোকসমাগম হওয়ার
কারণ হলো-খালেদা জিয়ার প্রতি যে অবিচার তা মানুষ মনের মধ্যে পুষে রেখে গণবিস্ফারণ
ঘটিয়েছে। আরেকটি কারণ, দীর্ঘদিন ধরে তারেক রহমান প্রান্তিক জনতাকে নিয়ে, বিশেষ করে
তৃণমূল নিয়ে যে কাজ করেছেন তার সংঘবদ্ধ একটি রূপ। তাছাড়া জনস্বার্থে বিএনপির
কর্মসূচিও আরেকটি কারণ। আমরা গণদাবিকে সম্পৃক্ত করেছি দেখেই মানুষ আসছে, পাশে
দাঁড়িয়েছে। সুতরাং যত বাধা-বিপত্তি আসবে রাজনৈতিকভাবে সহনশীলতা ও কৌশল দিয়েই তা
মোকাবিলা করব।’