পদ্মা সেতুর প্রভাব কুয়াকাটায় জমজমাট পর্যটন বাণিজ্য
পদ্মা
সেতু দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন খাতের সম্ভাবনা যে দ্বার খুলে দিয়েছে, তার কিছুটা
প্রমাণ মিলেছে এবারের ঈদের ছুটিতেই। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় এবার
ঈদের ছুটিতে বিপুল পর্যটক ভিড় করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ছিল গতকাল
মঙ্গলবার। পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রিক বাণিজ্যও ছিল রমরমা।
পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকত এলাকার ফুচকা বিক্রেতা থেকে শুরু করে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসা—সবই ছিল জমজমাট। কারণ, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারই ঈদের ছুটিতে সর্বাধিক পর্যটক ভিড় করে কুয়াকাটায়। তবে পর্যটক আসার এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। জানতে চাইলে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কুয়াকাটায় আমাদের অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল রয়েছে ৭৪টি। আমাদের সদস্যের বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। সব মিলিয়ে ১৩০টি হোটেল–মোটেলে ঈদের পরদিন থেকে গড়ে ২৫-৩০ হাজার পর্যটক অবস্থান করেছে। যার মধ্যে হাতে গোনা কিছু বিদেশি পর্যটকও ছিল। মোতালেব শরীফ জানান, ১৫ জুলাই পর্যন্ত কুয়াকাটার হোটেল–মোটেলগুলোতে পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং রয়েছে। তাই আশা করছি, আগামী কয়েক দিনও পর্যটককেন্দ্রিক ব্যবসা জমজমাট থাকবে। শুধু ঈদের ছুটি নয়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সারা বছরই কুয়াকাটার পর্যটন বাণিজ্য সরগরম থাকবে বলে আশা করছেন তিনি। স্থানীয় হোটেল–মোটেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটায় সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির হোটেল–মোটেল রয়েছে ১০-১৫টির মতো। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এসব হোটেল–মোটেলে শতভাগ আগাম বুকিং রয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির হোটেলের ৭০-৮০ শতাংশ এবং তৃতীয় শ্রেণির হোটেলের ৫০-৬০ শতাংশের মতো বুকিং ছিল।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে এখন মানুষ সহজেই কুয়াকাটা আসতে পারছেন। এ কারণে পর্যটক বেড়েছে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট, লেম্বুর চর, জাতীয় উদ্যান, রাখাইন মার্কেটসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে গত তিন দিন পর্যটকের বেশ সমাগম ছিল। সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান জানান, সৈকতের দুই দিকের অংশ মিলিয়ে ফিশ ফ্রাই বা ভাজা মাছ বিক্রির ৪৫টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে ঈদের ছুটিতে দিনে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার কোনো কোনো দোকানে ৬০-৭০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। তাতে গত তিন দিনে এসব দোকানে অর্ধকোটি টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। ভাজা মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল টুনা, কোরাল, লাক্ষা, গলদা চিংড়ি, রূপচাঁদা ও কাঁকড়ার। এদিকে কুয়াকাটাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে বেড়ানোর জন্য ৩০০–৩৫০ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল রয়েছে। এসব মোটরসাইকেলচালক সমিতির সভাপতি আব্বাস কাজী। তিনি বলেন, পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় একেকজন মোটরসাইকেলচালক এখন দিনে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। তাতে হিসাব করলে দেখা যায়, ৩৫০ মোটরসাইকেল থেকে দিনে গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান বলেন, ‘পদ্মা সেতু এ এলাকার পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। তার কিছু সুফল আমরা এবারের ঈদের ছুটিতে দেখতে পেয়েছি।’ তবে কুয়াকাটা ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের কেউ কেউ এটির অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন। ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক আসাদ চৌধুরী বলেন, কুয়াকাটা সৈকত ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সৈকতসহ আশপাশে এলাকা ময়লা-আবর্জনা বেশি। আবার হোটেল-মোটেলগুলোর সেবার মানেও ঘাটতি আছে। এসব অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে। কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন পুলিশের বেশ কয়েকটি দল এ কাজ করছে। সৈকতে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্যও তৎপর রয়েছে পর্যটন পুলিশ।