চামড়ায় সুদিন ফেরাতে প্রয়োজন ৩টি উদ্যোগ

বছর ১৫ আগেও চামড়াজাত পণ্য, বিশেষ করে জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, মানিব্যাগ ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয়। সময় বদলেছে। চামড়ার জায়গা দখল করে নিয়েছে কৃত্রিম চামড়া (আর্টিফিশিয়াল লেদার)। বর্তমানে বিশ্বে যে পরিমাণ জুতা বিক্রি হয়, তার ৮০ শতাংশই কৃত্রিম চামড়ার তৈরি। ফলে ধীরে ধীরে চামড়ার বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। ২০২০ সালে চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ছিল ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত ব্র্যান্ডগুলো প্রতি জোড়া চামড়ার জুতা ১৫০ থেকে ১ হাজার ডলারে বিক্রি করে। পরিবেশদূষণের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী তারা বিক্রি করে না। হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরীতে দূষণের ঘটনা ঘটে। এ কারণে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা আমাদের চামড়া কেনেন না। বাধ্য হয়ে তাই চীনাদের কাছে কম দামে, অর্থাৎ প্রতি বর্গফুট চামড়া ১ ডলারে বিক্রি করছি আমরা। অথচ ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করলে আমরা ৫০৬০ শতাংশ বেশি দাম পেতাম।

চামড়া খাতে সুদিন ফেরাতে তিনটি উদ্যোগ দরকার। প্রথমত, নেতিবাচক ভাবমূর্তি দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত,আর্থিক সমস্যা থেকে ট্যানারিগুলোকে বের করে আনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। হাজারীবাগে থাকার সময়ই ১৫৫টি ট্যানারির ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ ছিল। প্রতিবছর সেই ঋণের ওপর সুদ বাড়ছে। হেমায়েতপুরে আসার পর সেই ঋণের কারণেই ট্যানারিমালিকেরা আর্থিকভাবে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্যানারিমালিকদের দীর্ঘ মেয়াদে স্বল্প সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া উচিত। তৃতীয়ত, চামড়া শিল্পনগরীর পরিবেশদূষণ বন্ধ করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উচিত, দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তত ২০টি ট্যানারিকে আন্তর্জাতিক সংগঠন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পাওয়ার উপযুক্ত নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের অনুমতি দেওয়া। সেটি হলে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) ওপর চাপ কমে যাবে। একই সঙ্গে চামড়া খাতের অচলাবস্থা কেটে যাবে।

সবশেষে কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। সারা বছর যে পরিমাণ চামড়াসংগ্রহ হয়, তার মধ্যে ৪৫৫৫ শতাংশ আসে কোরবানির ঈদে। কয়েক বছর ধরে একধরনের অনিশ্চয়তার কারণেই কাঁচা চামড়া কম দামে বিক্রি হচ্ছে। গরুর হাটে হাসিল আদায়ের সময় ক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে ১০ কেজি লবণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেটি হলে কোরবানির পরপরই চামড়ায় লবণ লাগানোর বিষয়টি সহজে নিশ্চিত করা সম্ভব। আর লবণ লাগালেই এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চামড়া নষ্ট হবে না। তখন কোরবানিদাতা কিংবা মসজিদমাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া বেচাকেনায় দরকষাকষির সুযোগ পাবে। দামও বেশি পাবে। মহিউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)