তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য
২০৩০
সালের মধ্যে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে
যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর এ সময়
পোশাকশ্রমিকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ লাখে। বিদায়ী ২০২১–২২
অর্থবছরে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মানে ১০ হাজার কোটি
ডলারের লক্ষ্য অর্জনে আগামী ৯ বছরের মধ্যে বাড়তি ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি ডলারের পোশাক
রপ্তানি করতে হবে।
এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বা ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বিজিএমইএ। ২০১৪ সালে এই লক্ষ্য ঘোষণার পর একটি পথনকশাও তৈরি করেছিল সংগঠনটি। যদিও শেষ পর্যন্ত করোনাসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হয়নি। রাজধানীর গুলশানের এক অভিজাত হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টেকসই পোশাকশিল্প গড়তে ২০টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিজিএমইএ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় সংগঠনটি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পোশাকের রপ্তানি ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। এ সময় জনগণ, অন্তর্ভুক্তিকরণ, স্বচ্ছতা, অবকাঠামো, উদ্ভাবন, সার্কুলারিটি, বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ও পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি বিজিএমইএর
নতুন লোগো উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমি চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি মিরান আলী, সাবেক
সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। বিজিএমইএর ২০ লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম—কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানো, টেকসই কাঁচামাল ব্যবহার ৫০ শতাংশে উন্নীত করা, শোভন কাজের পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত করা, পানির অপচয় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা, ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার শতভাগে নামিয়ে আনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া, গ্যাস–বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশ হ্রাস, নারী–পুরুষের সমতা শতভাগ নিশ্চিত, কর্মসংস্থান ৬০ লাখে উন্নীত করা, উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশে উন্নীত করা, পৃথিবীর সব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি করা, শতভাগ সুশাসন নিশ্চিতকরণ, মোট কারখানার ৮০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব করা, ১০ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি অর্জন ইত্যাদি। এগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ১৭টি গোল বা লক্ষ্যের সঙ্গেও সমন্বয় করে করা
হয়েছে। পরে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ২০টি লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে টেকসই পোশাকশিল্প গড়তে একটি পথনকশা তৈরির কাজ চলছে। তিনটি আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেই কাজ করছে। ১০ হাজার কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি সম্ভব কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যেসব পোশাক রপ্তানি করি, তার সঙ্গে বেশি মূল্য সংযোজিত হয় এমন পোশাক উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা টেকনিক্যাল টেক্সটাইল রপ্তানিতেও জোর দিচ্ছি। ৫ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরাচেষ্টা করেছি। তবে লক্ষ্য নির্ধারণের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫–১৬অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের ব্যবসায় কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। তারপর তো করোনা
হানা দেয়।’বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাকের হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২১ সালের হিসাব এখন প্রকাশ না করলে বাংলাদেশের হিস্যা ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সেটি ১০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিজিএমইএর সভাপতি। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫শতাংশ। তবে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। তার মানে গত অর্থবছর শেষে যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটি পরিমাণ বা সংখ্যায় হয়নি। গত মে–জুন মাসে বিজিএমইএতে ইউডির (আমদানি প্রাপ্যতা) সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশকমেছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘গত১২–১৩ বছর ধরে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। জাতীয় সংসদ কার্যকরভূমিকা রাখছে। সে কারণে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে পেরেছি আমরা। রাস্তায় কোনো অস্থিরতা কিংবা গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। কাজেই এই ধারাকেও আমাদেরঅব্যাহত রাখতে হবে।’