পদ্মা সেতুর প্রভাব কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশা

পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন দক্ষিণের জেলা শরীয়তপুরের কৃষকেরা। বছরের পর বছর উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা। পানির দরে পণ্য বিক্রি করতে হতো তাঁদের। পদ্মা সেতুর বদৌলতে তাঁরা পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা করছেন। কৃষকেরা কৃষিজাত পণ্য ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বড় পাইকারি বাজারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।শরীয়তপুরে কৃষিজাত পণ্য বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার জাজিরা উপজেলারকাজিরহাট বাজার। এ উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের শাহেদ আলী ব্যাপারী তাঁর উৎপাদিত পণ্যএত বছর কাজিরহাট বাজারে বিক্রি করে আসছেন। এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ১০ থেকে১৫ টাকা। এক কেজি শসা পাঁচ থেকে ছয় টাকায়। যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় এত দিন ঢাকায়আনতে পারেননি। সেই এক কেজি পেঁয়াজ ঢাকায় বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শসা বিক্রিএকই দামে।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ শনিবার খুলে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার নাওডোবা ইউনিয়নেরজমুদ্দার স্ট্যান্ডে কথা হয় শাহেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা বলেন,বছরের পর বছর তাঁরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ঠকেছেন। আর ঠকতে চান না। এখন তাঁরা মাঠেরউৎপাদিত ফসল নিয়ে যাবেন ঢাকায়।শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলাটি কৃষিবৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। জেলায় ছয়টি উপজেলা আছে। এ জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৭৯হাজার ৪৪৯ হেক্টর। রবি মৌসুমের ফসল এই এলাকার প্রধান ফসল। জেলায় মসলা ফসল ধনে,কালিজিরা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচের আবাদ হয়। কালিজিরার মাঠ থেকে উৎপাদিত কালিজিরা মধুদেশে বিদেশে ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে গতকাল সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর কারণে অনেকে জেলায়কৃষিজাত প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র করতে যাচ্ছে। তারই একজন জাজিরা উপজেলা পরিষদেরচেয়ারম্যান মোকারক আলী শিকদার। তিনি একজন পোশাক খাতের ব্যবসায়ী। শরীয়তপুরে একটিকৃষিজাত প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র করার কাজ শুরু করেছেন তিনি। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছেন।

শরীয়তপুরের বাসিন্দা সেলিম আল মামুন যিনি বর্তমানে মাদারীপুরে একটি উচ্চবিদ্যালয়েশিক্ষকতা করছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে নিজ বাড়িতে এসেছেন। গতকাল কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে কৃষিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্যপাবে। যে কেউ চাইলে তার পণ্য ঢাকায় নিয়ে আসতে পারবেন।সরেজমিন ঘুরে কথা হয় দুলাল মাতবর, আবদুল মান্নান হাওলাদারসহ বেশকয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, সেতু না থাকায় তাঁরা এত বছর নিরুপায় হয়ে পণ্যস্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন। এখন সেতু চালু হয়েছে। তাই ঢাকায় নিয়ে পণ্য বিক্র করবেন। এদিকে ঢাকার বাজারে ফুল যায় মূলত যশোর থেকে। সাভার, ধামরাই ও গাজীপুরথেকেও ফুল ঢাকায় যায়।শরীয়তপুরেও ফুল চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুকেকেন্দ্র করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ থেকে ৮০ জন কৃষককে ফুল চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণদেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের জমিতে ফুল চাষ শুরু করেছেন।কর্মকর্তারা বলছেন, যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে পদ্মাসেতু। সেই সঙ্গে কৃষিতে আসবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ফসলের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পেরপাশাপাশি জেলার উৎপাদিত প্রায় ১২২ মেট্রিক টন মধুর উচ্চমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরতে তৈরি হবে মৌ প্রসেসিং সেন্টার, হিমাগার। কৃষি বিপণনে আসবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন।সেই সঙ্গে এলাকার শস্য বিন্যাসে যুক্ত হবে ব্রকলি, মাশরুম, বিদেশি ফল চাষসহ নানাধরনের উচ্চমূল্যের ফসল চাষ। ঢাকার বিভিন্ন সুপারমার্কেটের সঙ্গে সংযুক্তি ঘটলেকৃষক অধিক মূল্য পাবেন। কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষেরস্বপ্নের দুয়ার খুলে দেবে।জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে কৃষি প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র করতে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগকরছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। বিশেষ করে ধনে, কালিজিরা থেকে মধু সংগ্রহপ্রক্রিয়ার বিষয়ে আগ্রহ বেশি।