সরকার-দেশের সমালোচনা করার আগে সতর্ক হওয়া উচিত: তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্ব বেনিয়াদের
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এই পদ্মা সেতু নির্মাণের
মধ্য দিয়ে একটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, যারা সময়ে সময়ে কারণে-অকারণে সরকার ও
দেশের সমালোচনা করেন, কথা বলার আগে তাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন।
বুধবার (২২ জুন) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন
মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের
আর্থসামাজিক উন্নয়নে পদ্মা সেতুর অবদান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল- পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে
ও বিশ্বব্যাংক যা বলেছে সেটি সত্য। বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে মামলায় হেরে
যাওয়ার পর টিআইবির ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। টিআইবি বিভিন্ন সময়ে যে বক্তব্য দেয়
সেগুলো যে, অনেকটাই রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেয়, এটি প্রমাণিত।
সিপিডি বিভিন্ন সময় যে বক্তব্য দেয় সবগুলো বলবো না, তবে অধিকাংশই রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।
পদ্মা সেতু ব্যয় বাড়ানোর সমালোচনার বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন,
মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। নদীশাসনে ব্যয় হয়েছে আট হাজার
৭০৬ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে এক হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর
ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১১ সালের দিকে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা দেওয়া হতো, এখন দেওয়া
হয় তিনগুণ টাকা। ফলে এতে খরচ হয়েছে দুই হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। ২০১১ সালে যখন এই
ডিটেলস সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় তখন এর খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় তিনশ কোটি
ডলার, যা বর্তমান বাজার মূল্যে ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়।
‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের বর্তমান
খরচ হিসাব করলে ১৭ হাজার কোটি টাকা দাঁড়ায়। পদ্মা সেতুর সমপরিমাণ দৈর্ঘ্যের হার্ডিঞ্জ
ব্রিজ এখন নির্মাণ করতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো। অথচ পদ্মা সেতু হার্ডিঞ্জ
ব্রিজের তিনগুণ এবং রেল ও সড়কপথ রয়েছে। কিন্তু সেখানে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি
টাকা। ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণে কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে
আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির অবস্থা এখন এমন, লজ্জায় যে
মাথা হেট হয়ে গেছে, কী করলে লজ্জা রক্ষা করা যায় সেটি বুঝে পাচ্ছে না।
‘পদ্মা সেতু কী উনাদের
বাপের?’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো বলিনি এই সেতু কারও বাপের। এই সেতু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আপামর জনতার জন্য নির্মাণ করেছেন। এই সেতু খালেদা
জিয়া ও মির্জা ফখরুলের জন্যও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো সেখানে
যারা বলেছিরেন- পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগ সরকার কখনো নির্মাণ করতে পারবে না। নির্মাণ
করলেও জোড়াতালি দিয়ে হবে, কেউ উঠবেন না। এখন যারা বলেছিলেন, ‘কেউ
উঠবেন না’ তাদের সেতুতে ওঠার অধিকার আছে কি না সেই প্রশ্ন দেখা
দিয়েছে। আমরা বলছি, আপনারা উঠুন, তবে আগের বক্তব্যের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ও আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ব বেনিয়াদের
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেখ হাসিনার সক্ষমতার প্রতীক হলো পদ্মা সেতু। যেভাবে পদ্মা
সেতুকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল বিশ্বব্যাংকের মোড়লরা ও আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
এতকিছু উপেক্ষা করে সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার ফলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা এটি করতে সক্ষম হয়েছেন। যারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছিল তারা নিশ্চুপ হয়ে
গেছেন। তারা দেশে আছেন নাকি বিদেশে আছেন সেটা আমিও জানি না। কেউ কেউ সুর পাল্টে
দিচ্ছেন। কারা কখন কী বলেছেন তা বিস্তারিত বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান
অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন চুপ্পুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি
সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খান মাহমুদ
আমানত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী
লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর প্রমুখ।







