ঈদের কেনাকাটায় সুতির পোশাকে ঝুঁকছে সবাই

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ঈদের পাশাপাশি এবার বৈশাখের কেনাকাটায়ও ধুম পড়েছে শপিংমল ও ফ্যাশন হাউজগুলোতে। এবার ঈদ কাটবে বেশ গরমের মধ্যে। তাই সুতির পোশাকের বেশি চাহিদা রয়েছে। ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে সুতির পোশাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ফ্যাশন হাউজগুলো।

ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলছেন, এবারের ঈদে কিছুটা ভ্যাপসা গরম ও বৃষ্টি দুটো সময়ের জন্যই আদর্শ হিসেবে সুতির ফেব্রিকসই বেছে নেওয়া হয়েছে। এবার সুতি, লিলেন, জর্জেট ও শিফনের চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে। 

বসুন্ধরা শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখ ও ঈদের জন্য এবার হালকা ও রঙিন কাপড় বেশি কিনছেন ক্রেতারা। গরমের কারণে শিশু ও বয়স্করাও সুতির কাপড়ে বেশি ঝুঁকছেন। সিম্পল ডিজাইনের ঢিলেঢালা পোশাক বেশি চলছে। তরুণদের জন্য বাজারে রয়েছে হালকা ডিজাইনের পাঞ্জাবি-পাজামা, শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়া, কাবলি ও শেরওয়ানি। অন্যদিকে, তরুণীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফ্রক ও ফতুয়া। শিশুদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়া, ফ্রক, সেলোয়ার কমিজ। এছাড়াও বয়স্ক পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও নারীদের জন্য হালকা ডিজাইনের শাড়ি রয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে বাজারে আকর্ষণীয় ডিজাইনের পোশাক বাজারে এনেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, ইয়োলো, এক্সটেসি, সেইলর, গ্রামীণ ইউনিক্লো, সারা লাইফস্টাইল, অঞ্জনস, কে-ক্রাফট, বিশ্ব রঙ, দেশালসহ স্বনামধন্য ব্র্যান্ডগুলো।

এবারের ঈদের পোশাকের ডিজাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে সারা লাইফস্টাইলের ফ্যাশন হেড অব ডিজাইনার শামীম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এবার ঈদে গরমের কথা চিন্তা করে সুতির ফেব্রিকসটা প্রেফার করেছি। আমরা তরুণ-তরুণী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য সূতির কালেকশন আনার চেষ্টা করেছি। গরমের কথা চিন্তা করে এখন নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢালা পোশাক চলছে। আর শিশুদের পোশাকে সুতির ফেব্রিকসটা মেইনটেইন করছি। সবার পোশাকের ক্ষেত্রেই এবার আরামদায় ও বেশি উজ্জ্বল কালার পোশাক বেশি এসেছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে বয়স্কদেরও সুতির পোশাক এসেছে। বয়স্ক নারীদের জন্য শাড়ি, পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি আছে। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে বয়স্কদের জন্য সাদা ও উজ্জ্বল রঙ রেখেছি। এটি তারা বেশি পছন্দ করে। বয়স্কদের পোশাকে ভারি কোনো কাজ রাখা হয় না। তাদের পোশাকে হালকা হাতের কাজ, ছোট প্রিন্ট রাখা হয়। পারপেল, পিংক কালারটাও বেশি চলে। এবারে নারীদের ক্ষেত্রে কাফতান পোশাক ট্রেন্ড আছে। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ শার্ট, কাবলি বেশি চলছে।

ফ্যাশন ব্র্যান্ড অঞ্জনস-এর প্রধান নির্বাহী শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। এটা আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। তবে এবার ঈদে গরম থাকবে, তাই আমরা সুতির কাপড়টাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। যেহেতু উৎসবের দিনে সবাই একটু এক্সক্লুসিভ প্রোডাক্ট পরতে চায়, তাই সুতির পাশাপাশি অন্যান্য কাপড়ও থাকছে। তরুণ-তরুণীরা এখন সব ধরনের পোশাকই পরে। মেইনলি তারা যে জিনিসটা পছন্দ করে সেটা হলো ফিটটা তাদের মতো কি না। সব ধরনের কাপড়ই পছন্দ করে, ভ্যালু এডিশন নিয়ে এতো মাথা ব্যথা তাদের নেই। তারা চায় ফিটিংসটা যেন সুন্দর হয় ও প্যাটার্নটা সুন্দর হয় সেটি তারা বেশি পছন্দ করে।

তিনি আরও বলেন, তরুণরা তো মূলত টিশার্ট, পলোশার্ট, শার্ট এগুলো পছন্দ করে। কিন্তু ঈদের দিন কিন্তু সব তরুণরাই পাঞ্জাবি পড়ে। আমরা তরুণদের জন্য কিছু পাঞ্জাবি করেছি। যেগুলোর ফিটিংস অন্য পাঞ্জাবির থেকে একটু আলাদা। এই পাঞ্জাবিগুলো তরুণরা একটু বেশি পছন্দ করছে। ছেলে শিশুদের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট, টিশার্ট, ফতুয়া এবং মেয়ে শিশুদের জন্য ফ্রক, সেলোয়ার কমিজ ও ফতুয়া থাকছ।

কে-ক্রাফটর উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, এবার বৈশাখী ও ঈদ একই সময়ে। সেজন্য আমরা যেসব প্রোডাক্ট করেছি তার মধ্যে কিছু প্রোডাক্ট বৈশাখকে চিন্তা করে ও কিছু ঈদকে চিন্তা করে করা। তবে এবার বৈশাখের তুলনায় ঈদের প্রিপারেশনটা একটু বেশি। এমন কিছু প্রোডাক্ট আছে যে যেটা বৈশাখেও পড়া যাবে আবার ঈদেও মানানসই।

ঈদের সময় গরমে আরামের জন্য সুতির মধ্যে নানা রকমের পোশাক এনেছি। খুবই ফাইন কোয়ালিটির সুতি যেমন আছে তেমনি সাশ্রয়ী মূল্যের হালকা কাজের সুতির পোশাকও আছে। যেহেতু ঈদের রাতে ও পরেরদিন রাতে বিভিন্ন দাওয়াত থাকে সেজন্য সে উপযোগী কিছু পোশাক এনেছি। একটু গর্জিয়াস লুকের। সময়কে ধরে, কোন সময়ে কোন পোশাক তার প্রয়োজন সেভাবেই পোশাক বাজারে এনেছি।

তিনি বলেন, এবারের ঈদের ট্রেন্ড হলো অনেক ভারি ও অনেক কাজের পোশাক কম দেখা যাবে। একটু সিম্পল ও কাছাকাছি কালার সেডে করা পোশাক। যেই রঙের কাপড় সেটির কাছাকাছি রঙের কাজ করা পোশাক মানুষ বেশি কিনছে। অনেক বেশি কাজের বাহুল্য নয়। ফিনিশিংটা ভালো ও চোখের আরাম আছে এরকম প্রোডাক্টই বেশি দেখা যাবে। যেহেতু সারা পৃথিবীতেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে তাই প্রোডাক্টে যেন দাম বেড়ে না যায় সেটি চিন্তা করেও পোশাকের ডিজাইনিং বা কারুকাজ করা হয়েছে। এতে ক্রেতার ওপর চাপ পড়বে না।

বসুন্ধরা শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসা নাহিদা আক্তার জানান, ঈদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছি। এবারের ঈদে যেহেতু গরম থাকবে, তাই সুতির কাপড়ই কিনছি। হালকা ডিজাইনের আরামদায়ক পোশাকই কিনবো। তবে দাম কিছুটা বেশি, তাই বুঝে শুনেই কিনতে হচ্ছে। আমাদের তো নির্ধারিত বাজেটেই কিনতে হয়, তবে আড়ংয়ের পোশাকের দামে কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে। তাই সেখান থেকেই বেশি কেনাকাটা করা হয়।