৪৩ দেশে ফার্নিচার মেশিনারিজ রফতানি করছে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা
উড
ওয়ার্কিং শিল্পের ব্যতিক্রমী এক বাংলাদেশি উদ্যোক্তা মো. নইমুল হোসেন খান। গত দুই
দশক ধরে এই শিল্পের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। ফার্নিচার শিল্পকে
প্রযুক্তি নির্ভর করা, এই খাত সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষিত করাসহ এই শিল্পকে এগিয়ে
নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
১৯৯৯ সালে
তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান উড টেক সলিউশন কাঠের তৈরি আসবাবপত্র ও দরজা
প্রস্তুতকারকদের কারিগরি সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন
ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফ্যাক্টরির ডিজাইন করা, মেশিনারীজের লেআউট প্ল্যান তৈরি করা,
প্রয়োজনীয় মেশিনারীজ দেয়া, ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ লোকবল তৈরি করা ও আফটার সেলস সার্ভিস
দেয়া নিয়ে কাজ করছে ফার্নিচার শিল্পের এই ফ্রন্ট লাইনার।
তিনি সারা পৃথিবী থেকে অত্যাধুনিক মেশিনারিজ
এনেছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের ফার্নিচার কারখানা
গড়ে উঠেছে। কেরানীগঞ্জে তিনি গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাংলাদেশের
একমাত্র উড ওয়ার্কিং টেকনোলজি সেন্টার। যেখানে বিনামূল্যে ফার্নিচার শিল্পে
মানুষেরা টেকনোলজি সম্পর্কে ট্রেনিং নিতে পারেন।
বাংলাদেশে
ফার্নিচার শিল্পের উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৯৯ সাল থেকে। তখন থেকেই বিদেশী একটি এনজিও
দেশের ফার্নিচার শিল্প উন্নয়নে প্রজেক্ট শুরু করে। তারা নইমুল হোসেন খানকে
পার্টনার হিসেবে যুক্ত করে। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে গিয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার
জন্য শত শত ফ্যাক্টরিতে তিনি বছরের পর বছর প্রোডাকশন ও ট্রেনিংয়ের কাজ করেন। তার
প্রেক্ষিতেই হাতিল, নাভানা, পারটেক্স, আখতার, ব্রাদার্স, নাদিয়া থেকে শুরু করে
ব্র্যান্ডেড ফার্নিচারের আধুনিকায়নের কাজ করেন। পরবর্তীতে গড়ে তোলেন উড ওয়ার্কিং
টেকনোলজি সলিউশন দেয়ার জন্য উড টেক সলিউশন নামক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের
ফার্নিচার শিল্পের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য বাজার সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও পিছিয়ে আছে।
এই পশ্চাৎপদতা দূর করতেই মূলত উড টেক সলিউশনের জন্ম। উড টেক সলিউশনের যাত্রার সময়
অটোবি ছিল একমাত্র প্রফেশনাল অর্গানাইজেশন। তারপর পর্যায়ক্রমে বাজারে আসে নাভানা ও
পারটেক্স। এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের প্রফেশনাল সেটআপ তৈরি হয়েছিল উডটেক সলিউশনের হাত
ধরেই। এরপর একে একে অন্য বড় ব্র্যান্ডগুলোও আধুনিক ফ্যাক্টরি গড়ে তোলার মনোযোগ
দেয়। তাদের সবারই এই কাজে সহায়তা করেছে উড টেক সল্যুশন।
অদক্ষ
শ্রমিক নিয়োগ সুবিধার জন্য গার্মেন্টেসর পরেই আসে অতিমাত্রায় অবহেলিত ফার্নিচার
খাত। ফার্নিচারের বাজার দেশীয় ভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। আর বিশ্বে প্রায় ৫০০
বিলিয়ন কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১৫ শতাংশ। আশার কথা হচ্ছে
প্রতিদিনই ফার্নিচারের চাহিদা বাড়ছে।
ইতোমধ্যে
উড টেক সলিউশন ছোট ফ্যাক্টরিগুলোর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ শুরু
করেছে। অঞ্চল ভিত্তিক ১০০টি করে ফ্যাক্টরি নির্বাচনের মাধ্যমে এই কাজ ইতোমধ্যে
শুরু হয়েছে। উড টেক সলিউশনের উদ্দেশ্য হল এই ফ্যাক্টরিগুলোকে আধুনিক ফার্নিচার
বানানোর জন্য সক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করা। কারণ বর্তমানে ফ্যাক্টরিগুলো যেসব
ফার্নিচার তৈরি করছে সেগুলোর ফিনিশিং যথার্থ হচ্ছে না। ফলে কম দামে বিক্রি করতে
হচ্ছে। তাদের মানোন্নয়নে মেশিনারিজ ও ট্রেনিং প্রদানের কাজ করছে উড টেক
সলিউশন।