নেতাদের বিরোধ মেটেনি, কমিটির মেয়াদ পার

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের কমিটি হয়েছে ২০১৩ সালে। নগর কমিটি শুরু থেকেই দুই ধারায় বিভক্ত। ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এই বিরোধ এখন আরও চাঙা হয়েছে। আর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার দূরত্ব বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। এই বিরোধের কারণেই মূলত বাঁশখালী ও বোয়ালখালী উপজেলায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে সম্মেলন হয়নি।

শীর্ষ নেতাদের বিরোধ মিটিয়ে সংগঠন চাঙা করতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা আগামীকাল মঙ্গলবার নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও থানা ও ওয়ার্ড কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এরপর ২৭ মার্চ উত্তর জেলা এবং পরদিন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে।

দলীয় সূত্র জানায়, নগর কমিটির বিভক্তির নালিশ কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছেছে। গত বছরের শেষ দুই মাসে অনুষ্ঠিত নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন নিয়ে পুরোনো বিরোধ চাঙা হয়। এই সম্মেলন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীপন্থী কিছু জ্যেষ্ঠ নেতা কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন একতরফাভাবে কিছু কিছু ইউনিটে সম্মেলন করেছেন।

এরপর বিরোধ মীমাংসায় ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। রিভিউ কমিটি আবার ১৫টি থানা তদারকি কমিটি গঠন করে। কিন্তু পরে তা স্থবির হয়ে রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তখন থেকেই নগর আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন ও নাছিরপন্থী দুটি ধারা চলে আসছে।

তিন বছর মেয়াদি কমিটির ইতিমধ্যে সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পরও দুটি ধারা সক্রিয় রয়েছে। এখন মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়টি তাঁর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অংশ হিসেবে পরিচিত।

বিরোধের বিষয়ে মহিউদ্দিনপন্থী হিসেবে পরিচিত নগর কমিটির সহসভাপতি খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের মধ্যে বিভক্তি যা আছে, তা নিরসনের জন্য কেন্দ্র থেকে একটি ফর্মুলা দেওয়া হয়েছিল। রিভিউ কমিটি করে দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেটা এখনো বলার মতো পর্যায়ে আসেনি। এখন কেন্দ্রীয় নেতারা এসে প্রতিনিধি সভা করে সংগঠনকে চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের সাবেক এই প্রশাসক বলেন, দূরত্ব নিমেষেই শেষ হয় যদি আন্তরিকতা নিয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বসেন। আমরা বাধ্য হয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছি। এর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

রিভিউ কমিটির সদস্যরা হলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষ। তাঁরা ইতিমধ্যে দুটি সভা করেছেন। ১৫টি থানা তদারকি কমিটিও গঠন করেছেন। কিন্তু এরপর আর এগোয়নি।

বিভক্তি বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারবার ফোন করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের। তবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদারকি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ তো কোনো অভিযোগ দেয়নি। স্বচ্ছতার সঙ্গে ইউনিট সম্মেলন করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির অধীনে গত আট বছরে ছয়টি থানায় কমিটি গঠন করেছে। তার মধ্যে আবার তিনটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। বাঁশখালী ও বোয়ালখালীর সম্মেলন আটকে রয়েছে দক্ষিণ জেলা কমিটি এবং স্থানীয় সাংসদের দ্বন্দ্বে। বাঁশখালীর কমিটি হয় সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে। বোয়ালখালীর কমিটি হয় এর দুই বছর পর।

বোয়ালখালী উপজেলার একটি কমিটি সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ গঠন করলেও তাতে সই করেননি সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। ওই কমিটির সদস্যরা নিজেদের উপজেলা আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচয় দেন। বাঁশখালীতে সম্মেলন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে জেলা নেতাদের দূরত্ব রয়েছে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে বেশির ভাগ কমিটি করে দিয়েছি। শুধু বাঁশখালী ও বোয়ালখালী নানা কারণে করতে পারিনি। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধি সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।

মফিজুর রহমান আরও বলেন, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও জেলা সম্মেলন করার বিষয়েও নির্দেশনা আসবে ওই সভা থেকে।

চট্টগ্রামের বিরোধ নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সামনাসামনি বসে অভাব অভিযোগ শুনব। বসেই তাদের দূরত্ব ঘুচিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা হবে। তাঁদের মতামতের আলোকে আমরা আলোচনা করে দলের প্রতিটি পর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন ও অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।