৩০ বছর চেষ্টার পর নিজস্ব ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে

শুল্ক-করসংক্রান্ত কোনো কাজে আপনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) যাবেন। গাড়িবারান্দা ও ফোয়ারা পেরিয়ে লবিতে ঢুকতেই পাঁচ তারকা হোটেলের আমেজ পাবেন। যেমন সুপরিসর লবিতে অতিথিদের বসার সুবন্দোবস্ত চোখে পড়বে, ডানে-বাঁয়ে দুটি এসকালেটর ও ছয়টি লিফট দেখা যাবে। এ ছাড়া দোতলায় লেনদেনের জন্য ব্যাংকের বুথ তো থাকবেই। খিদে পেলে ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাও আছে। প্রথম চারতলা পর্যন্ত আসা করদাতা-দর্শনার্থীদের জন্য নানা ধরনের সেবা বুথ থাকবে।

চমকে গেলেন, নাকি ভাবছেন এ দেশের রাজস্ব ভবন এমন হবে? হ্যাঁ, সত্যি এমনটাই হচ্ছে। এনবিআরের কার্যালয় এ রকম নকশাতেই তৈরি করা হচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী জুন মাসে। এর মানে, প্রতিষ্ঠার ৫০ ও চেষ্টা শুরুর ৩০ বছর পর অবশেষে রাজধানীর সেগুনবাগিচার কার্যালয় ছেড়ে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে উঠতে চলেছে এনবিআর।

২০০৮ সালে জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। কিন্তু জমি নিয়ে জটিলতার কারণে সাত বছর দেরিতে ২০১৫ সালে কাজ শুরু হয়। আবার ডিজাইন বা নকশা পরিবর্তনের কারণে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

রাজস্ব ভবন প্রকল্পের পরিচালক ও এনবিআরের কর কমিশনার লুৎফুল আজীম বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে সব পূর্তকাজ শেষ হয়ে যাবে। পরের দুই মাসে রং করাসহ বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে। দৃষ্টিনন্দন এ ভবনে এলে সরকারি অফিস সম্পর্কে করদাতা ও দর্শনার্থীদের গতানুগতিক ধারণা পাল্টে যাবে। কারণ, এখানে আধুনিক সব সুবিধা থাকবে। অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় এখানে করদাতাদেরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ

রাজস্ব ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কের মোড়ে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, দুটি বেসমেন্টসহ ১২ তলা মূল ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে এলেও, কয়েক শ শ্রমিক এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনসহ অবশিষ্ট কর্মযজ্ঞ শেষ করছেন।

নিচতলায় কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালুর জন্য মেশিন, তথা যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। ভবনজুড়ে কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণের জন্য ছাদের দেয়ালে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন সিলিং বসানোও প্রায় শেষ। ৪০০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তনের পাশাপাশি মোট সাতটি সভাকক্ষ বানানো হয়েছে।

তিন দশকের চেষ্টা

স্বাধীনতা অর্জনের পরের বছর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই ঢাকার সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবন থেকেই এনবিআরের যাবতীয় কার্যক্রম চলছে। ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কর বিভাগের অনুকূলে দুই একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সেখানে কাজ শুরু করতে পারেনি এনবিআর। পরে সেই জমি বরাদ্দ পেয়ে গড়ে ওঠে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

২০০১ সালে বর্তমান জায়গায় দুই একরের প্লট বরাদ্দ পায় এনবিআর। সেখানেও বিপত্তি বাধে। ষাটের দশকে আগারগাঁও এলাকায় সব সরকারি কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যেখানে রাজস্ব ভবন হচ্ছে, সেই প্লটের আদি মালিকের উত্তরাধিকারীরা আশির দশকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। সেই মামলা চলতে থাকে দশকের পর দশক। ফলে ২০০১ সালে প্লট বরাদ্দ পেলেও জমি বুঝে পেতে দেরি হয়।

২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। মামলা নিষ্পত্তি হলে অবশেষে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় এনবিআর। এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। বিশেষ করে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে স্পেস বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়।

প্রথমে এই ১২ তলা ভবন নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পায় বহুল আলোচিত ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির হোতা জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা মূল ভবনের কাঠামো তৈরি করে। কিন্তু জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর কাজ বন্ধ থাকে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য তাহের ব্রাদার্স অ্যান্ড হোসেন কনস্ট্রাকশন জেভিকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।