২১ হাজার কোটি টাকা কার
দেশের
আর্থিক খাতে দাবিদার নেই এমন অর্থের পরিমাণ ২১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ২০ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেওয়া যায়নি। আর
ব্যাংক আমানতের ১৩৫ কোটি টাকার কোনো দাবিদার নেই। ফলে দীর্ঘদিন থেকে টাকাগুলো পড়ে
আছে।
বিনিয়োগকারীদের
ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া, উত্তরাধিকারী জটিলতা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন
দুর্বলতার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে অর্থ
ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া
হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব অর্থ ব্যবহারে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
যুগান্তরকে বলেন, দাবিদারহীন অর্থ বিতরণে প্রকৃত মালিক চিহ্নিত হওয়া জরুরি।
তবে
লভ্যাংশের টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ কেউ না কেউ এ
টাকার মালিক। তারা কোথাও না কোথাও আছেনই। যাতে কোনো সময় প্রকৃত দাবিদার ফিরে এলে
তাদের অর্থ পরিশোধ করা যায়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।
জানা গেছে,
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২০৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের অদাবিকৃত লভ্যাংশের ২১
হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে বোনাস শেয়ারের মূল্য ১৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা
এবং নগদ লভ্যাংশ ৯৫৬ কোটি টাকা। আবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জের আলাদা হিসাবে ডিএসইর
বিনিয়োগকারীদের ১১ হাজার ৭৪০ কোটি এবং সিএসইর বিনিয়োগকারীদের ৯ হাজার ২০৪ কোটি
টাকা।
ঢাকা স্টক
এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীদের বোনাস শেয়ার লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ হাজার ১০৫ কোটি আর
নগদ লভ্যাংশ ৬৩৫ কোটি। আবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীদের বোনাস
লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮৮২ কোটি এবং নগদ লভ্যাংশ ৩২২ কোটি টাকা। আর একক
কোম্পানি হিসাবে শুধু ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোতে পড়ে আছে ৮ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
শেয়ারবাজারের
বিপুল পরিমাণ এ অর্থ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে অর্থ দিয়ে ‘পুঁজিবাজার
স্থিতিশীলতা তহবিল’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক
মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে প্রধান করে এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।
এক্ষেত্রে
কোম্পানিগুলোর জন্য একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এর আলোকে কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ
অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বিও হিসাবে পাঠাতে হবে। আর অপরিশোধিত লভ্যাংশ একটি আলাদা
সাসপেন্স হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে।
আর লভ্যাংশ
অনুমোদনের ৩ বছর পর অদাবিকৃত বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ ‘বিএসইসির পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা
তহবিল’ নামে হস্তান্তর করতে হবে। এ তহবিল থেকে বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া
হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর
লভ্যাংশের অর্থ এ তহবিলে দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানতে চাইলে
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ
শামসুদ্দীন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে এ অর্থ আসতে শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে নগদ লভ্যাংশের ৫০০ কোটি টাকার মতো আমাদের হাতে এসেছে। বোনাস শেয়ারও আসছে।
আশা করছি,
ধীরে ধীরে সব চলে আসবে। ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অবণ্টিত লভ্যাংশের ব্যাপারে তিনি
বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো এই টাকা দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়নি। বাংলাদেশ
ব্যাংকের নির্দেশনা এলে ব্যাংকের টাকাও আসবে।
এদিকে
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টানা ১০ বছর ধরে লেনদেন হয় না এমন হিসাবে
গ্রাহকদের প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা জমা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এসব
অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অদাবিকৃত আমানত হিসাবে ‘আনক্লেইমড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট’
জমা করেছে।
এসব
হিসাবধারীর তালিকা সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত হয়েছে। কোনো গ্রাহক বা তার উত্তরাধিকারী টাকা দাবি করলে ব্যাংক কেন্দ্রীয়
ব্যাংক থেকে এনে তা ফেরত দিচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর
ধরে কোনো ব্যাংক হিসাবে লেনদেন না হলে এবং ওই আমানতের গ্রাহককে খুঁজে না পাওয়া
গেলে সে অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে
‘আনক্লেইমড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট’ নামে একটি হিসাব খোলা হয়েছে।
ওই হিসাবে ব্যাংকগুলো এসব টাকা জমা করে।
নিয়ম
অনুযায়ী, আমানতের গ্রাহক বা তার উত্তরাধিকারীদের ফিরিয়ে দিতে হিসাবধারীর নাম,
হিসাব নম্বর ও টাকার পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে
প্রকাশ করা হয়। এ সময় কোনো দাবিদার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে তার অর্থ ফেরত দেয়
বাংলাদেশ ব্যাংক। ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সরিয়ে ফেলার পর আরও এক বছর বাংলাদেশ ব্যাংক
ওই অর্থ ফেরত দিতে পারে। ওই সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না নিলে তা সরকারি হিসাবে জমা
করে দেওয়া হয়। প্রতিবছর এ হিসাব হালনাগাদ করা হয়।
ব্যাংকগুলোকে
তাদের বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বছরে একবার এসব তথ্য পাঠাতে
হয়। সূত্র জানায়, অনেক কারণেই কোনো কোনো হিসাবে দীর্ঘ সময় ধরে লেনদেন হয় না।
এরমধ্যে রয়েছে- গ্রাহকের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী যোগাযোগ না করলে, হিসাবে কোনো
সমস্যা হলে, হিসাবটি কেওয়াইসি (গ্রাহককে জানা) অসম্পূর্ণ থাকলে এবং গ্রাহক
ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ না করা উল্লেখযোগ্য। ওই সব হিসাবের অর্থ অদাবিকৃত
অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।